1. info@mirzapurpratidin.com : admin :
  2. news@mirzapurpratidin.com : mirzapur mirzapur : mirzapur mirzapur
রাশেদ রহমানের একগুচ্ছ কবিতা - mirzapurpratidin.com
শিরোনামঃ
মির্জাপুরে সুরে সুরে দর্শক মাতালেন সুর সম্রাট মশিউর রহমান মির্জাপুরে রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করলেন পৌর প্রশাসক মির্জাপুরে আন্দোলনে হিমেলের দুচোখ অন্ধের মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার আল্লাহর গজব পড়েছে আ.লীগের উপর: সাবেক এমপি কালাম মির্জাপুরে স্কাউটস নির্বাচনে ভোটে সহিনুর, ফরহাদ ও সেলিম বিজয়ী মির্জাপুরে ছাত্র শিবিরের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন মির্জাপুরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা মির্জাপুরে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করলেন ইউএনও মির্জাপুরে আ.লীগের উন্নয়ন কাজের ফলক ভাঙার চেষ্টায় গণপিটুনি মির্জাপুরে আধিপত্য কেন্দ্রিক হামলা-পাল্টা হামলায় আতঙ্ক

রাশেদ রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

  • আপডেট টাইম : Wednesday, July 8, 2020
  • 775 বার

করোনা-কন্যা

জলের গেলাস হাতে
মা-বাবার মৃত্যুশয্যায় যাওয়া যাবে না
ছোট ভাইবোনের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মাথায় বোলানো যাবে না হাত
বউ কিংবা প্রেমিকার ঠোঁটে চুমু খাওয়া নিষিদ্ধ
মুছে দেয়া যাবে না সন্তানের চোখের নোনা জল
স্বজনের শেষকৃত্য হবে ধু-ধু মাঠে দু-চারজন অচেনা
লোকের তত্ত্বাবধানে
চোখ মেলে চাও ঈশ্বর
দেখো, তোমার অবুঝ সন্তানের কী দুর্গতি!

যখন পৃথিবীর মনুষ্যকুল তোমার ভয়ে কম্পমান;
ও মুকুটশোভিত করোনা-কন্যা
তুমি এসো এই কবির দীর্ণ কুটিরে
তোমার ঠোঁটে এঁকে দেবো গহিন চুম্বনের অমোচনীয় চিহ্ন
কবিতা লিখব তোমার স্তন-তনু- চোখের তারার রূপ বর্ণনা করে

জেনে রেখো সর্বনাশী
কবির করোটিতে সৃজিত হয় যতো কবিতা
ততো বাড়ে তার জীবনীশক্তি
তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিই কবির মৃত্যু নেই, কবিতার মৃত্যু নেই;
কবি ও কবিতা ছাইভষ্ম থেকেও জেগে উঠে
আকাশে উড়াল দেবে ফিনিক্স পাখির মতো।

প্রণোদনার জল

আমি ভাগ-চাষি নই; চকে একটুকরো সোনা-ফলা জমি আছে
বিআর-২৯ ধান বুনেছি, দুধ-ধান দুলছে বাতাসে; পাকবে কদিন পর
আমার উঠোনবাড়ি ম-ম করবে নতুন ধানের সুগন্ধে
মাত্র ক‘টি দিনের অপেক্ষা —
কিন্তু এখন বাড়িতে উনুন জ্বলে না; হাঁড়িতে চাল নেই

আমি ভাগ-চাষি; নিজের জমি নেই
শহরবাসী জালাল চাচার গাঁয়ের চকে কয়েক খাদা ভুঁই
আমি তার দু-বিঘার ছামটা চাষ করি নিজের মনে করে
আর কদিন গেলেই ঘরে উঠবে সোনার ধান
কিন্তু এখন সইতে পারছি না ক্ষুধার জ্বালা

বাজারের সবচে চালু মনোহারি দোকানটা আমার
দোকানের তাকে-তাকে রোদের মতো ঝলমল করে বাহারি সব শখের পণ্য
কীভাবে সকাল-দুপুর- সন্ধ্যা গত হয়ে রাত নামে ঠাহর পাই না
মধ্যরাতের ক্ষণকাল আগে দোকানে তালা ঝুলিয়ে ঘরে ফিরি
এখন দোকান বন্ধ; খাচ্ছি চালান ভেঙে ভেঙে

আমি পোলট্রি খামারি; বাড়ির পাশেই মুরগির খামার
দীর্ঘদিন বেকার বসে ছিলাম বাড়িতে; কাজ পাইনি কোথাও
শেষতক এনজিও থেকে ঋণ তুলে ডিম-মাংসের ব্যবসায় নেমেছি
এখন জলদরেও বিকায় না মাংস-ডিম; মড়ক খামারে
ভিটেবাড়ি বিক্রি করেও ঋণ শোধ হবে না আমার

মণ্ডলবাড়ির দশ বিঘা জমিতে সৃজিত আমার ফুলবাগান
নিজের জমি নেই ; সাহস করে পরের জমি লিজ নিয়ে বাগান করেছি
গোলাপ রজনীগন্ধা জুঁই চামেলি জারবেরা কতো যে চোখ জুড়ানো ফুলের কলহাসি বাগানে
আহারে! সব ফুল এখন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে; বিক্রিবাট্টা নেই
ব্যাংকের ঋণ, মহাজনের দাদন, জমির লিজের টাকার বাড়ি কই?
আমি সৌদি-প্রবাসী; খেতখোলা বিক্রি করে জেদ্দা গেছিলাম
ওদেরই এখন মরার দশা; জোর করে প্লেনে তুলে দিয়েছে
ফিরে এসেছি কপর্দকশূন্য হাতে, যেন পথের ভিক্ষুক আমি।

বেহুলা-লখিন্দর ও করোনা

চাঁদপুত্র লখিন্দরের বাসরশয্যা সৃজিত লোহার ঘরে
নিশ্ছিদ্র ঘর; কোথাও চুল পরিমাণ ফাঁকফোকর নেই যে
ঘরে ঢুকতে পারে কালনাগ;
বরের পাশে নির্ঘুম বেহুলা; ক্ষণকালের তন্দ্রার সুযোগে
ঘটে যদি কোনো অঘটন; চা্ঁদ সদাগর তাকে কেটে
টুকরো-টুকরো করে ভাসিয়ে দেবে কালিদহ সাগরে

লখিন্দরের গলা জড়িয়ে শুয়ে ছিল বেহুলা
রাত পোহাতে আর কত দেরি! মোরগ বাগ দিলেই
কেটে যাবে স্বামী হারানোর ভয়
” মা মনসা, তোমার পায়ে পড়ি, সদাগর না-দিক
আমি তোমাকে পূজা দেবো; আমার সিঁথির সিঁদুর
তুমি কেড়ে নিও না….”
বেহুলার কাতর মিনতিতে মনসার ক্রোধ কমেনি তিলমাত্র
ঘুম ভাঙল না লখিন্দরের; কালনাগ কখন এসেছিল
বেহুলা কিছুই জানে না

আমি ঘরবন্দি; একা, একাকী; পাশে নেই বেহুলা
ঘরে তড়জার ভাঙা বেড়া, ভাঙা খড়খড়ি; দরজার
তক্তায় অজস্র খোড়ল
টিনের চাল খেয়ে ফেলেছে উইপোকা আর দাঁতাল ইঁদুরে
ভয়ে আমার দিন কাটে না; রাত কাটে না
কখন আমার ভাঙা ঘরে ঢুকে পড়ে মনসা-কন্যা
মুকুটশোভিত করোনা!

ঈশ্বরের অন্ধ চোখ

বড়ো ঈশ্বরের চোখে পড়ে বড়ো বড়ো দর্জিবাড়ি
মেঝো ঈশ্বরের চোখ গেরস্তের প্রকাণ্ড খড়ের পালার ওপর
ছোট ছোট ঈশ্বরের চোখ চাল-ডালের বস্তার দিকে;
কী করে বস্তা নেয়া যাবে নিজের ঘরে
আমরা অদৃশ্য; আমাদের কেউ দেখে না; প্রণোদনা পড়ে দূরে দূরে

করোনার ভয়ে আমরা ভীত নই
আমরা পুরুষানুক্রমে শুনে আসছি — হায়াতমউতের ওপর কারো হাত নেই
কিন্তু যদ্দিন বেঁচে আছি বউ-বাচ্চার মুখে দিতে হবে দুটো ডাল-ভাত
ঘরবন্দিকালে, বিশ্বাস করো মালিক; মিথ্যা বললে জিব খসে পড়বে
আমাদের হাতপাত একদম খালি— একটুকরো রুটি কেনার মতো কড়ি নেই ট্যাকে; করোনার দেখা মেলার আগেই হয়তো সপরিবারে মৃত্যু হবে অনাহারে

আমরা রিকশাচালক; এখন রিকশাও ঘরবন্দি, জং পড়ছে রিকশার চাকায়
আমরা অটো চালক, মাইক্রোচালক, বাসচালক; আমরা চালকের সহকারী
আমাদের সকল রুট বন্ধ
আমরা দিনমজুর; রোজগার হলে খেতে পাই, নইলে বালবাচ্চা নিয়ে উপোস
আমরা কারখানার শ্রমিক; সব কারখানার গেটে ঝুলছে তালা
আমরা বাংলার হতদরিদ্র চাষি
আমরা বাজারের চা-দোকানি; দোকান বন্ধ, বাড়ির চুলাও জ্বলে না
আমরা হাটের ক্ষুদে বানিয়া
আমরা বটতলা মোড়ের পান-বিড়ি বিক্রেতা
আমরা ঝালমুড়ি বেচে খাই
আমরা ভবঘুরে
আমরা হিজড়া
আমরা বেশ্যা
আমরা বেশ্যার দালাল
আমরা পথের কুত্তা-বিলাই
বলো, দিনদুনিয়ার মালিক, পেটে পাথর বেঁধে ক’দিন আর চলে?
কোনো কোনো মেঝো ঈশ্বরের বচন শুনে অবাক হই মালিক;
যখন তারা বলে, দেশে কেউ না খেয়ে আছে এটা অবিশ্বাস্য এবং স্রেফ গুজব
আমরা শুনছি, আমাদের কানে খবর আসছে ঈশ্বরের প্রণোদনা ছড়িয়ে পড়ছে চৌদিকে
আমরাও মৃত্যুর আগে তোমার প্রণোদনা হাতে পেতে চাই
আমরা বলতে চাই না ঈশ্বরের এক চোখ অন্ধ, তাই আমাদের চোখে দেখে না!
অচল অস্ত্র

তুমি যে এতটা দুর্বল, ভীরু, নখদন্তহীন; তা আমাদের জানা ছিল না
এতোদিন আমরা তোমাকে অযথাই যমের মতো ভয় করেছি
তোমার অগণিত মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র পরমাণু বোমা কোথায় রেখেছ
ঘরে-ঘরে শত্রু ঢুকেছে, কচুকাটা করছে তোমার দেশের মানুষ
তারপরও পেন্টাগন কেন ব্যবহার করছে না কোন অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র!

তোমার কথাই যেখানে সর্বোচ্চ আইন নিশ্ছিদ্র প্রাচীরঘেরা দেশে
উহানেই তোমার পারমাণবিক বোমা তৈরির সবচে বড়ো কারখানা
দেখো, শত্রুর বুকে কত সাহস গোপনে ঢুকে পড়ল সেখানে
তোমার প্রশিক্ষিত গোয়েন্দাদের চোখে পড়ল না কেউ
অসহায়ের মতো রাজপথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুমি দেখলে শবমিছিল!

পৃথিবীর কোথাও ডুবত না বৃটিশের সূর্য; বলে ইতিহাস
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা; তারাও নাকি ছিল “মহান-রাজা-রানী”র একান্ত অনুগত
এখনো এই নীল রক্তবাহীদের যুদ্ধজাহাজ- বোমারু বিমানের খ্যাতি বিশ্বজোড়া
অথচ দেখো, গাছমরা-পাতার মতো অবিরাম ঝরে পড়ছে তারা
এখন বুঝি রানীর সূর্য পুরোটাই ডোবে!

আমরা কত-না শুনেছি রোম-সাম্রাজ্যের সৌর্য-বীর্যের কাহিনি
তোমাদেরও অভাব নেই সিপাইসান্ত্রী- সৈন্যসামন্ত-জীবাণু অস্ত্রের
অথচ শত্রুর মুখোমুখি শক্ত পায়ে তোমরা দাঁড়াতেই পারলে না
আমরা দেখলাম তোমার আতংকগ্রস্ত উর্ধ্বমুখি পরাজিত দুই হাত
অতঃপর সভ্যতার মুখে থুথু ছিটিয়ে মৃত মানুষেরা ঢুকল গণকবরে!

করডোবার জগৎবিখ্যাত ইতিহাস-ঐতিহ্য মানুষের মুখে মুখে
তোমাদের যুদ্ধকৌশলের কাছে হার মানে পৃথিবীর সব সেরা সমরবিদ
তোমরা রণতরীর ইস্পাতকঠিন পাহারা বসিয়েছ দেশের চারদিকে
এখন দেখো, তোমাদের সব কৌশলই কেমন বালকদের তীর ছোঁড়ার মতো ব্যর্থ
ক্ষুদে এক শত্রুর রোষানলে পুড়ে তোমরা ছারখার!

তোমরা যারা এতোদিন করেছ শক্তির বড়াই
কারুণের মতো নিজের ঘরে মজুত করেছ পৃথিবীর সব মারণাস্ত্র
কাকে মেরে কে খাবে এই ছিল তোমাদের নিরন্তর প্রতিযোগ
এখন তোমাদের ঘরে ঘরে ঢুকেছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক শত্রু
অথচ দেখো, তোমাদের সব অস্ত্রই এখন অচল; কোন অস্ত্রই কোন কাজে আসছে না!

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Mirzapurpratidin এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ভিডিও বা ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি
Site Customized By NewsTech.Com