এস এম এরশাদ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সেই চা বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক পৌরসভা নির্বাচনে ছয় নম্বর ওয়ার্ডে আবারো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মির্জাপুর পৌর এলাকার বাইমহাটী গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে। ২০১৫ সালে তিনি প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
নাজিম উদ্দিনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক তৃতীয়। ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাস করেন। এই জনপ্রতিনিধি পেশায় ছিলেন চা-বিক্রেতা। তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরও চা বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। দিনভর চায়ের দোকানে বসেই এলাকার মানুষের সমস্যার কথা শোনেন। কর্মচারী ছাড়াই দোকান চালান। চা ছাড়াও বিক্রি করেন বিস্কুট, চানাচুরসহ অন্যান্য পণ্য। যার যেমন চাহিদা তা পূরণ করছেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এলাকাবাসীর পরিবারের সদস্যরা কেমন আছেন খোঁজ নিচ্ছেন। তাঁর স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলে দোকানে বসেই করে দিচ্ছেন। দিচ্ছেন সিলমোহর।
সদালাপী রাজ্জাক কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরও আগের মতোই রয়েছেন। একবেলা বাবা নাজিম উদ্দিন দোকানে তাকে সময় দিলেও তিনি এখন অসুস্থ। ভাইদের মধ্যে বড় বলে কাঁধে সংসারের দায়িত্ব। অসুস্থতার কারণে তাঁর বাবা দোকানে বসতে পারেন না। এ কারণে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর দোকানে বসেন। মাঝখানে দুপুরের খাবার খেতে এক ঘণ্টার জন্য বাড়ি যান। ফিরে রাত আটটা পর্যন্ত দোকান করেন।
আব্দুর রাজ্জাক এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক। মেয়ে নবম শ্রেণি ও ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এবারের নির্বাচনে রাজ্জাকের প্রতিদ্ব›িদ্ব ছিলেন চারজন। এদের মধ্যে একজন বিএনপি আর তিনিসহ সকলেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। নির্বাচনী প্রচারনায় এলাকার অধিকাংশ মানুষ রাজ্জাকের পাশে এসে তাকে নির্বাচনী কাজে সহায়তা করেন। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে রাজ্জাক ৫৮০ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
বাইমহাটী গ্রামের বাসিন্দা কবি জহিরুল ইসলাম শেলী বলেন, কাউন্সিলর রাজ্জাকের কোন অহংকার নেই। সে কাউন্সিলর হয়েও আগের মতই মানুষের সেবার পাশাপাশি চায়ের দোকানও চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কারনে এবারও এলাকাবাসী তাদের প্রতিনিধি হিসেবে তাকেই বেছে নিয়েছেন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার যতটুকু উপার্জন হয়, তাতেই সংসার কেটে যাবে। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের মতোই গ্রামবাসীকে খুবই ভালোবাসি। আমি মানুষের ভালোবাসা নিয়েই আছি। পাশাপাশি চা বিক্রি করছি। যা আমার কাছে মানুষের ভালোবাসার মতোই মর্যাদাপূর্ণ। সেখান থেকে আমার রুজি চলে। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে আবার ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করায় আমি ওয়ার্ডবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
Leave a Reply