এই আমাদের বাবা
-জাহাঙ্গীর আলম জাহান
জুতো জোড়া সেই কবেকার- পাঞ্জাবিটাও পুরানো
মনে তো হয় বাবার এসব রাস্তা থেকেই কুড়ানো।
এই পোশাকেই বাবা থাকেন সকল সময় কী সুখে
খরচা হবে; ওষুধও তাই খান না অসুখ-বিসুখে।
বছর শেষে ঈদ এসেছে তাই তো বাঁশের ঝাড় কেটে
দুই হালি বাঁশ বিক্রি করে বাবাও গেলেন মার্কেটে।
সঙ্গে নিলেন আমাকে আর আমার ছোটো দু’ ভাইকে
আর আমাদের সবার বড়ো সেই মরিয়ম বুবাইকে।
এই দোকানে ওই দোকানে ঘোরেন বাবা নিরন্তর
সব পোশাকের মূল্য বেশি, থাকেন তবু ধীর অন্তর।
সাঁঝের পরে সবার জন্য কেনেন পোশাক পছন্দে
বুঝি না এই বাবার জীবন কে গড়েছেন ক’ ছন্দে?
নিজের জন্য নেন না কিছুই, কেনেন মায়ের শাড়িও
রাত হয়েছে, ফিরতে হবে- চল রে তাড়াতাড়িও।
তাগিদ দিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন বাবা যেই
বুবাই বলে, বাবা তোমার স্বভাব দেখি যা বাজেই!
নিজের গায়ের পাঞ্জাবিটা সেই কবেকার, পুরানো
দেখলে এসব সত্যি বাবা যায় না দুচোখ ঘুরানো।
তোমার জন্য জামা-জুতো কিনবে এবার চলো না
বাবা তখন হেসে হেসেই করতে থাকেন ছলনা।
আরে বোকা, কিনব পরে, দিন রয়েছে ঢের আরো
রাত হয়েছে, চল শিগগির, সময় হলো ফেরারও।
বুঝতে পেলাম বাবার বুকে তখন অনেক ঝড় ছিল
ঘোর আঁধারে বাবার চোখে জল চিকচিক করছিল।
এই হলো রে বাবার স্বরূপ, এই আমাদের বাবা যে
এক চোখে তার ঘরসংসার অন্য চোখে কাবা যে।
–
বাবা
-গোলাম রব্বানী রতন
বাবা-
তার মতো আর মানুষ তুমি
কোথায় খুঁজে পাবা?
ক্যামনে তোমার ভালো হবে
কাল তুমি কী খাবা
এসব যিনি নিত্য ভাবেন
তিনিই তোমার বাবা।
নিজকে বড়ো চালাক ভেবে
ভাবছ যাকে হাবা
তিনিই তোমার বাবা।
শ্রদ্ধা যাকে করলে বুকে
গড়তে পারো কাবা
তিনিই তোমার বাবা।
বাবা-
তার মতো আর মানুষ তুমি
কোথায় খুঁজে পাবা?
–
বাবা আমার
-গোলাম নবী পান্না
কখন বাবা ফিরবে বাড়ি
পথটি চেয়ে থাকি
বাবার আদর পেতেই যত
নানান স্বপ্ন আঁকি।
অফিস থেকে ফিরে বাবা
কোলে নেবেন তুলে
সারাদিনের কথা আমি
যাব তখন ভুলে।
বাবা আমার দুঃখ বোঝেন
আমিও তেমন বুঝি
বাবার আদর পেলে পরে
আর কিছু না খুঁজি।
–
হয়ে আছ তারা
-আনিসুর রহমান খান
সব শুনি সব দেখি পাখি ডাকা ভোর
আমার সময় চলে, কাটে না তো ঘোর
আযানের ধ্বনি আর জায়নামাজে
তোমার কণ্ঠ কোরাস আর না বাজে।
স্মৃতির দহন বুকে তারাফুল ফোটে না
আদর-শাসন আর ভাগ্যেও জোটে না
কোথা কোন গগনের হয়ে আছ তারা
আমার দুচোখে জল, দাও বাবা সাড়া।
মেঘ যতো সেজে ওঠে আকাশের গায়
তোমার মোহন ছবি হৃদয় কাঁপায়
বুকে আজ কত ঢেউ জানে শুধু পদ্মায়
হৃদয়-বাগান পোড়ে নতজানু শ্রদ্ধায়।
–
বাবা আমার বাবা
-সনজিত দে
ওই যে দেখো বটবৃক্ষ
ঠিক যে আমার বাবা
বটবৃক্ষের মতো এমন
আর কাকে যায় ভাবা?
এই বাবাটা আগলে রাখেÑ
কত্তো সরল-সোজা
দূর্যোগে সে-ই বয়ে বেড়ায়
মস্তবড়ো বোঝা।
শাসন-আদর তিনিই করেন
তার যে রুটিন কড়া
আমার জন্য তিনিই গড়েন
সুখের বসুন্ধরা।
বাবা আমার রুখতে পারে
ঘূর্ণিঝড়ের থাবা
কীযে আমার মধুর লাগে
ডাকতে বাবা, বাবা!
–
বাবার কথা
-শম্পা প্রদীপ্তি
আলুরপাতা আলুথালু
পদ্মপাতায় শিশির
ঝিকমিকানো নীল জোনাকি
আঁধার ভাঙে নিশির।
দূরের বনে রাতের পাখি
শোনায় ব্যাথার গীতি
বাবার কথা ভাবলে দোলে
ছোট্টবেলার স্মৃতি।
বাবার কথা আলোকলতা
দোলকলতা জানে
বাবার পরশ জড়িয়ে আছে
উঠোনভরা ধানে।
সাঁঝেরবেলা কুলায় ফেরে
বকরা ডানা মেলে…
আমিই শুধু ঝিমমেরে যাই
বাবার কথা এলে।
–
বাবা আমার
-মজনু মিয়া
জন্ম দিয়ে লালনপালন
করেন আমায় বাবা
নিজের হাতে দেন রুখে সব
দুখের কালো থাবা।
স্বপ্ন-আশা বুকে দিয়ে
এগিয়ে দেন হাত
দেন পাহারা জীবন পথে
এলে ভয়াল রাত।
ছেঁড়া জামা পরেও তিনি
থাকেন সদা হেসে
ছেলের জন্য নতুন জামা
আনেন ভালেবেসে।
গায়ের ঘামে ছেলের চোখের
স্বপ্ন এঁকে দিতে
জীবনটাকে বাজি ধরেন
গ্রীষ্ম-বষার্- শীতে।
Leave a Reply