1. info@mirzapurpratidin.com : admin :
  2. news@mirzapurpratidin.com : mirzapur mirzapur : mirzapur mirzapur
শিরোনামঃ

বানর ও একটি হাঙর

  • আপডেট টাইম : Monday, September 28, 2020
  • 613 বার

আবু রেজা

একবোরেই সাগরের তীরে, যেখানে ভূমির শেষ আর সাগরের শুরু, সেখানে এক প্রাচীন ম্যানগ্রোভ গাছের শাখায় থাকে এক বানর। এখানে থাকতেই ভালোবাসে সে। এখানে থাকে আরো অনেক প্রাণী। এদের সঙ্গে মনের কথা খুলে বলা যায়, খেলা করা যায়। এদের বেশির ভাগেরই আকার-আকৃতি তারচেয়ে ছোট। আর এ বিষয়টিই তার কাছে বেশি পছন্দের। কেননা, এজন্যই সে মনে করে এখানে সে বেশ নিরাপদ আর শান্তিতেই আছে। অনেক বড় শিকারি প্রাণী, যেমন- সিংহ এখানে খুব কমই আসে শিকার করতে। কারণ, এখানকার মাটি কর্দমাক্ত। এসব প্রাণীর বড় বড় থাবা কাদায় আটকে যায়। তাই তারা শিকার ধরার জন্য দ্রুত দৌড়াতে পারে না। এখানে আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এসবের মধ্যে কিছু পাখি উড়তে পারে, কিছু পাখি ভূমির উপর দৌড়ে বেড়ায়। যেমন- বনমোরগ মাছের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করে, তাদের জলের তলের গল্প শুনতে ভালোবাসে। সত্যি বলতে কি, বানরটির সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু শ্যামুস নামের এক হাঙর আসে এখানে।
প্রত্যেক বিকালে সূর্য যখন হেলে পড়ে, শ্যামুস তখন বানরবন্ধুকে দেখার জন্য চলার পথ বদলে সাগর তীরের ম্যানগ্রোভ গাছটির দিকে চলে আসে। বানরও তার হাঙড়বন্ধুর অপেক্ষায় থাকে। সে গাছটির এমন একটি সুন্দর ও মজবুত ডাল খুঁজে নিয়েছে যে ডালটি এমনভাবে নুয়ে পড়েছে যেন সাগর জলের উপরিতল ছুঁই ছুঁই করছে। বানরটি এখানে বসেই হাঙরবন্ধুর জন্য অপেক্ষা করে। সে বিশেষভাবে লক্ষ রাখে, হাঙরবন্ধু শ্যামুসের তিন কোনা আকৃতির পাখনা ও সূচাল মুখ জলের উপরে ভেসে উঠছে কি না।
বানর ডালের উপরই লাফায়, উপর-নিচে দোল খায়। চিৎকার করে বলে, এখানে, শ্যামুস, আমি এখানে। আর উঃ উঃ উঃ শব্দ করে। শ্যামুস যখন সাঁতরে কাছে চলে আসে, এই কয়েক গজের মধ্যে, তখন সে কিছুক্ষণ অগভীর জলে গড়াগড়ি খায়। তার বিরাট চোয়াল জলের উপরে তুলে ধরে বানরকে সম্ভাষণ জানায়, ওহে আমার বানরবন্ধু, গাছে উপর ঘুরে-ফিরে জীবন কাটাতে কেমন লাগছে বন্ধু?
বানরটিও একটু মজা করে জবাব দেয়, এ বড় কঠিন জীবন বন্ধু, বড় কঠিন, আমার লোনাজলের বন্ধু।
এভাবে তারা ম্যানগ্রোভ গাছের উপরের জীবন ও নীল সাগরের গভীর জলের জীবনের খবরাখবর জানাজানি করে। একে অন্যের অজানাকে জেনে নেয়। সারাদিনে বানরটি যেসব দুষ্টুমি করেছে সেসব কথা হাঙরবন্ধুকে বলে। এই যেমন- ছোট্ট পাখিকে সে কীভাবে তাড়া করেছে, কচ্ছপকাকুর পিঠে চড়ে কোথায় ঘুরে বেড়িয়েছে, অথবা উড়ন্ত পাখির শিকারি চোখের দৃষ্টি থেকে নিজেকে কীভাবে বাঁচিয়েছে- এসব বলাবলি করে। শ্যামুসও তাকে সাগরতলের সুন্দর সুন্দর প্রাণী সম্পর্কে গল্প বলে। শামুক-ঝিনুক শূঁড় দিয়ে কীভাবে হাঁটা-চলা করে, জলের উপরিতল থেকে আসা আলোকচ্ছটা ওরা কীভাবে অনুভব করে তা বলে। সাগরতলের উদ্ভিদ কীভাবে ঢেউয়ের তালে দোল খায়, তাও বলে।
কিন্তু শ্যামুসের প্রিয় বিষয় এসবের থেকে ভিন্ন। সে সবসময় খাবার-দাবার সম্পর্কে আলোচনা করতে পছন্দ করে।
যেসব মাছ সে প্রতিদিন গোগ্রাসে খায় সেসব মাছের স্বাদ ও গন্ধ সম্পর্কে কথা বলতে ভালোবাসে। তার বানরবন্ধুর প্রিয় খাবার কী সেই বিষয়ে সে সবসময় জানার আগ্রহ দেখায়। কিন্তু সত্যি বলতে কি, বানরটি খাবার-দাবার নিয়ে খুব একটা ভাবে না। সে সবসময়ই তৃণভোজী এবং সাধারণত ম্যানগ্রোভ গাছের পাতা খায়। কিন্তু তার মাঝেমধ্যেই মনে হয়, অনেক দিন আগে তার এক চাচাতো ভাই এসেছিল তাকে দেখতে। সে এক ব্যাগ তালের শাস নিয়ে এসেছিল। সেগুলো ছিল খুবই মজাদার। খুবই রসালো! খুবই মিষ্টি! শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে ওগুলো খেয়েছিল। তাই যখনই শ্যামুস তার প্রিয় খাবারের কথা জানতে চায়, বানরটি ম্যানগ্রোভ গাছের ডালে পিঠ ঢেকিয়ে আয়েশ করে শোয়, পেটে হাত বুলায়, আর তিন দিন তিন রাত ধরে সবগুলো তালের শাস খেয়ে শেষ করার গল্প বলে।
তারপর একদিন, শ্যামুস প্রায়ই যেই সময়ে আসে, যখন অস্তমান সূর্য পুরো ম্যানগ্রোভ বনকে উজ্জ্বল লাল আভায় রাঙিয়ে রাখে, ঠিক সেই সময়ে এসে উপস্থিত হলো। তাকে কিছুটা উত্তেজিত, কিছুটা খুশি মনে হলো! আগের মতো সে আর ঠাট্টা করে অযথা সময় পার করতে চাইল না, সরাসরি আসল কথায় চলে এলো।
সে চিৎকার করে বলল, হে আমার বানরবন্ধু! বলো তো, আমার কী হয়েছে? অনুমান করে বলো তো, কেন আমি এত খুশি? বলতে পারছ না তো! তুমি যে আমাকে তালের শাসের কথা বলেছিলে, মনে আছে? আমি সেই কথা আমার বউকে বলেছি। তুমি জানো, তার এক বন্ধু আছে। সে খাবারের ব্যবসা করে। তুমি তাকে যে জিনিসের কথা বলবে, সে তাই এনে দিতে পারবে। ব্যাপারটা তার কাছে এতই সহজ যে, তুমি বলা মাত্র সে তা এনে হাজির করবে। এতক্ষণ হাঙর নিজে নিজেই কথা বলে যাচ্ছিল। তার এত কথা শুনে বানরটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সত্যি বলতে কি, হাঙরের কথা শুনে বানর বিরক্তই হচ্ছিল। সে চাচ্ছিল, হাঙর ভনিতা রেখে আসল কথায় আসুক। তাই সে মাথাটা একটু ঝুকিয়ে হাসল। তারপর ভদ্রভাবে কিছু আওয়াজ করল, শ্যামুসকে দেখলে যেমন করে আর কি! উম উম উঃ উঃ এ্যা এ্যা উমম….।
অবশেষে হাঙর আসল কথা বলল, হ্যাঁ, আমার বউ কিছু তালের শাস পেয়েছে। তা খুব কম নয়, এক ব্যাগ ভর্তি। সে তোমাকে রাতে খাবার নিমন্ত্রণ দিয়েছে। আমাদের যেমনটি কথা হয়েছে, তাতে মনে হয়, সে এখন খাবার তৈরি করছে। তুমি কি যাবে?
বানর তো খুব অবাক! এর জবাবে কী বলা যায় তা বানর জানে না। আসলে একটা বানরের জীবনে এমন ঘটনা কখনো ঘটে না। তার মনে বাজতে থাকল একটিই কথা, তুমি কি যাবে? তুমি কি যাবে?
বানর বলল, ঠিক আছে শ্যামুস, বন্ধু আমার। আমরা সেখানে কীভাবে যাব? তুমি কোথায় থাক?
শ্যামুস তার সূচালো নাক উঁচিয়ে গভীর সাগরের দিকে দেখাল। বলল, ঐ দিকে আমার বাসা।
বানরটি বলল, আমিও তাই ভাবছিলাম। ঐ দিকে সাগরের গভীরে তোমার বাসা। আমি ওখানে কীভাবে যাব? এতদূর আমি সাঁতরে যেতে পারব না। তুমি জানো, আমি এই ম্যানগ্রোভ গাছে, আর এর আশেপাশেই থাকি। এর ধারে-কাছে অগভীর জলে হাঁটাহাঁটি করি, এটুকুই আমার বিচরণ ক্ষেত্র। আমি জানি এখানে আমার ডুবে মরার আশঙ্কা নেই। কিন্তু এর বাইরে আমার যাওয়ার উপায় নেই।
কিন্তু শ্যামুস ভাবছে, এটাই একটা খুব বড় সুযোগ। কারণ, তার একটা পরিকল্পনা আছে। এই সুযোগে সে তার ভাবনার কথাটা বলতে চায়। বানর শ্যামুসের পিঠে চেপে যেতে পারে। সে শ্যামুসের পাখনা ধরে বসে থাকল, শ্যামুস সাগরজলের একেবারে উপর দিয়ে সাঁতরে যাবে। এতে বানরের আদৌ ভেজার আশঙ্কা নেই। শ্যামুস বলল, তুমি কী ভাবছ? আমরা কি যাব? তাহলে চল, যাওয়া যাক। আমার বউ সব কাজ শেষ করে রেখেছে। সারাটা বিকেলে সে রান্নাঘরেই ছিল। সে তোমার জন্য মজার মজার খাবার তৈরি করেছে।
তোমরা জানো, বানরদের এাকটু রোমাঞ্চকর ও সাহসী না হলে চলে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওদের গোঁয়ার্তুমি তো থাকেই। তাই বানর দাওয়াতে যোগ দিতে রাজি হয়ে গেল। সে ডাল থেকে লাফিয়ে নামল, তার বন্ধুর পিঠে চড়ে বসল। শক্ত করে ধরে থাকল তার পাখনা। হাঙর শক্তপোক্ত লেজের ঝাপটা দিয়ে চলতে শুরু করল। তার মুখভর্তি দাঁত বের করে অট্টহাসি হেসে বলল, ইয়াপ্পি….।
বানরের জন্য এটা ছিল অভূতপূর্ব ও ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা। এরকম বিস্ময়কর ও অসম্ভব ভীতিকর ভ্রমণে সে আগে কখনো বের হয়নি। আসলে কখনোই সাগর ভ্রমণে সে যায়নি। সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ আর ঢেউয়ের তালে তালে ওঠা-নামা তাকে বিস্মিত করেছে। ঢেউগুলো যেন তাদের পেছন দিকে হটিয়ে দিতে চায়। এরকম অবস্থায় সাঁতার কাটার জন্য হাঙরের অনেক শক্তি দরকার হয়। এভাবে কিছুদূর যাওয়ার পর হাঙর তার চলার গতি কমিয়ে আনল, মাথাটা জলের উপরে তুলে ধরল।
হাঙর বলল, হে আমার বানরবন্ধু। কিছু কথা তোমার জানা উচিত। দেখো, আমার বউ অসুস্থ, তা সত্ত্বেও সে তোমার জন্য দারুণ মজার খাবার বানাচ্ছে।
বানরটি হাঙরের পিঠের উপরই একটু নড়েচড়ে বসল, যাতে সে হাঙরের কথা স্পষ্ট শুনতে পায়। বন্ধুর মনের অবস্থা সে বুঝতে পারছে। বিষয়টা একটু হালকা করার জন্য সে বলল, শরীরটা কেমন ভেজা ভেজা লাগছে। কেমন যেন একটু ঠান্ডাও লাগছে। একটু একটু ভয়ও পাচ্ছি। তারপর বলল, তুমি ঠিক বলেছ বন্ধু। তোমার কথা শুনে আমার দুঃখ হচ্ছে! তোমার বউয়ের কী হয়েছে? আমি কি তার জন্য কিছু করতে পারি?
হাঙরকে কিছুটা অপ্রস্তুত দেখাল। সে জড়সড় জঙ্গিতে বলল, প্রকৃতপক্ষে একমাত্র তুমিই চাইলে তার জন্য একটু সাহায্য করতে পারো। দেখো, সে তার চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিল। চিকিৎসক তাকে বলেছে, পৃথিবীতে একটি মাত্র জিনিস আছে, যা দিলে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। সে অবশ্যই ভালো বোধ করবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বানরটি জানতে চাইল, সেই জিনিসটি কী?
হাঙর ইতস্তত বোধ করল, খক্ খক্ করে কাশল। তারপর একটু নরম কিন্তু ভয়ার্ত স্বরে বলল, চিকিৎসক তাকে বলেছে, একটা বানরের হৃৎপিন্ড হাতে নিয়ে কাঁচা খেয়ে ফেলতে হবে। তাহলেই তার রোগ সেরে যাবে।
বানর একথা শুনে তো তাজ্জব। তার মনে হলো সে উথাল সাগরে পড়েছে। সে বিচলিতভাবে চারদিকে তাকাল। এসব কথার মাঝে যেন সে হারিয়ে গেল। তারপরও সহজাতভাবেই সে হাঙরের পাখনাগুলো হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে রাখল।
হাঙর রহস্যময় ও শান্ত ভঙ্গিতে বলল, এ কথা শুনে আমরা বিস্মিত। ধরো, তোমাকে যদি আমরা এক ব্যাগ তালের শাস দিই, তো তুমি তার বিনিময়ে আমাদের দেবে তোমার হৃৎপিন্ড। মনে কর, আমরা এ দুটো জিনিস বিনিময় করছি।
বানরের কানে ভেসে এলো সাগরের গর্জন। সে নিশ্চিত হতে পারছে না এটা আসলে সাগরের গর্জন, নাকি তার হৃদকম্পনের আওয়াজ। সে চিৎকার করে হাঙরকে ডেকে বলল, হে হাঙরবন্ধু, কোনো সমস্যা নেই। অবশ্যই আমি তোমাদের সাহায্য করব। তুমি কি আমার বন্ধু নও? আমি বলতে চাই, বন্ধুত্ব মানেই তো হৃদয়ের বন্ধন।
হেসে উঠল হাঙর। তারপর আনন্দসূচক কিছু আওয়াজ করল, আ-আ-আ-গ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, বানরবন্ধু, আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না, তোমার কথা শুনে আমি কতটা খুশি হয়েছি। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তুমি যদি আমার জন্য এ কাজটি করো, মানে আমার বউকে তোমার হৃদপিন্ডটি দাও, ভবিষ্যতে যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায়, যে কোনো জিনিস চাও, তোমার জন্য আমি তা এনে দেবো, তা যত দুর্লভই হোক, নয় তো আমার নাম শ্যামুসই নয়।
বানর খুব মৃদুস্বরে বলল, ওহে শ্যামুস, আমার লোনাজলের বন্ধু, তুমি একটা ভুল করেছ, একথাটি আমাদের যাত্রা শুরু করার আগেই বলা উচিত ছিল। কারণ, তুমি হয়তো জানো না, আমি আমার হৃদপিন্ড ঘরে রেখে এসেছি। যেই গাছে আমার বাড়ি সেই গাছের খুবই গোপন একটা জায়গায় হৃদপিন্ডটা রেখেছি। আমি সব সময় এ জিনিসটা ওখানটাতেই লুকিয়ে রাখি।
তারপর বানরটি স্তব্ধ রয়ে রইল, হাঙরের জবাব শোনার আশায়। হাঙর একথাটি কীভাবে নেয় শোনার জন্য দম প্রায় বন্ধ করেই রেখেছিল।
হাঙরটি থুথু ছিটাল। জোরে জোরে কাশল, গলায় গলগল আওয়াজ করল। জিজ্ঞেস করল, তুমি ওটা বাড়িতে রেখে এসেছ? তারপর আঁকাবাঁকা হাত বের করে হাসল।
বানর জানে এখন তাকে খুবই সাবধান হতে হবে। তাকে সতর্কভাবে কথাবার্তা বলতে হবে। সে গলার কাছে হৃদপিন্ডের কম্পন টের পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে এটা ভেবে, হাঙরটা লাফিয়ে উঠতে পারে। তাহলেই জীবন শেষ, সে একেবারে হাঙরের খোলা মুখের ভিতর চলে যাবে। তবুও সে আশা করছে হাঙরটা তাকে সন্দেহ করবে না।
বানরটি বলল, দেখ আমার বন্ধু, আমার মতো একটি বানরের জন্য হৃদপি- খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, সবচেয়ে বড় সম্পদ। একটি বানর যদি তার হৃদপি- হারিয়ে ফেলে তো তার জীবন সেখানেই শেষ। তাই আমি এ বিষয়ে খুবই সতর্ক। যেখানেই থাকি, এটি সবসময় নিরাপদ জায়গায় আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে চাই, যেন আমার যখন দরকার তখন এটা পাই।
ভয়ানক অসন্তোষ প্রকাশ করে হাঙর বলল, ওহ তাই! এখন আমরা কী করতে পারি আমার বানরবন্ধু?
বানর আশাবাদী ভাষায় বলল, ঠিক আছে। আমার মনে হয়, আমরা এখনও সাগরের তীর থেকে খুব গভীরে চলে যাইনি। তাই নয় কি? আমরা ফিরে যেতে পারি। আমি এক লাফে গাছে ওঠে যাব। হৃদপি-টি হাতে নেব। তারপর আমরা খুব বেশি হলে দশ থেকে পনের মিনিটের মধ্যে এখানে চলে আসব! তাড়াতাড়ি করো, ফিরে চলো! তোমার বউকে আর অপেক্ষায় রাখা ঠিক হবে না। চলো তাড়াতাড়ি!
হাঙর এই মুহূর্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! বানর তাকে সত্যি বলছে, নাকি ধোঁকা দিচ্ছে! সে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। কিন্তু এছাড়া তো তার আর কোনো উপায়ও নেই। যদিও বানরের কথা শুনে তার সন্দেহ যাচ্ছে না, তা সত্ত্বেও এখন তার সঙ্গেই যেতে হবে। এখন কী করা উচিত? সে বিষয়ে সে নিশ্চিত নয়। তাই সে বিশ্বাস করার ভান করল।
সে লেজ দিয়ে একটি ঝাপটা মারল, তারপর চোখা নাক ঘুরিয়ে দিল সাগর তীরের দিকে।
ঠিক আছে, আমার বানরবন্ধু, তাড়াতাড়ি যাওয়া যাক। এই বলে হাঙর যত দ্রুত সম্ভব সাঁতরাতে লাগল। হাঙর ভাবল, সে যত দ্রুত যেতে পারবে, বানরে মন বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা ততই কমে যাবে।
তারা পাঁচ মিনিটের কম সময়ের মধ্যে সাগরতীরে পৌঁছে গেল। তারা আগে সেই ম্যানগ্রোভ গাছটার কাছে গেল। হাঙর সাঁতারে গতি কমিয়ে আনল। বানরটি ঈশ্বরের নাম নিয়ে তার বন্ধুর পিঠ থেকে কাছাকাছি জলের দিকে জোরে এক লাফ দিল। ডালটা ধরল, বেয়ে ওঠে গেল উপরে, তারপর আরেক ডালে। তারপর আরো উঁচু আরেক ডালে। এভাবে ঝুলে ঝুলে উঠে গেল অনেক উঁচুতে। ম্যানগ্রোভ বনের মাঝে সবচেয়ে উঁচু গাছের উঁচু ডালে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারপর সে থামল, নিচে তাকাল।
সূর্য অস্ত গেছে। পূর্ণ চাঁদ দেখা দিয়েছে। ম্যানগ্রোভ বনজুড়ে ধূসর-হলুদাভ জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়েছে। বানরটি দেখতে পাচ্ছে সাগরজলে হাঙরের রূপালি পাখনা। তার চোয়াল যেন রাতের ঠান্ডা বাতাস লুফে নিচ্ছে।
ওহে বানর, বানরবন্ধু, কোথায় তুমি? তুমি কথা দিয়েছিলে তোমার হৃদপি-টা দিবে! ওটা কোথায়, কোথায় লুফিয়ে রেখেছ? বানরবন্ধু, কোথায় তোমার হৃদপিন্ড! এসব কথা বলল হাঙরটি।
বানরটি তাকে কোনো সাহায্য করতে পারল না। হঠাৎ তার সকল দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। সে ডাল ধরে লাফাতে শুরু করল। আর আওয়াজ তুলল, উঃ উহ উমম উহ উঃ। বলল, হে আমার নিষ্ঠুর হাঙরবন্ধু! আমি তোমার ধোঁকায় পড়ে মরেই গিয়েছিলাম, তাই নয় কি? আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে তোমার বোকামি! তুমি আমার চেয়ে একটু বেশিই নির্বোধ!!

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Mirzapurpratidin এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ভিডিও বা ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি
Site Customized By NewsTech.Com