1. info@mirzapurpratidin.com : admin :
  2. news@mirzapurpratidin.com : mirzapur mirzapur : mirzapur mirzapur
হলদে পাখির গল্প- মনিরা মিতা - mirzapurpratidin.com
শিরোনামঃ
মির্জাপুরে সুরে সুরে দর্শক মাতালেন সুর সম্রাট মশিউর রহমান মির্জাপুরে রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করলেন পৌর প্রশাসক মির্জাপুরে আন্দোলনে হিমেলের দুচোখ অন্ধের মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার আল্লাহর গজব পড়েছে আ.লীগের উপর: সাবেক এমপি কালাম মির্জাপুরে স্কাউটস নির্বাচনে ভোটে সহিনুর, ফরহাদ ও সেলিম বিজয়ী মির্জাপুরে ছাত্র শিবিরের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন মির্জাপুরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা মির্জাপুরে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করলেন ইউএনও মির্জাপুরে আ.লীগের উন্নয়ন কাজের ফলক ভাঙার চেষ্টায় গণপিটুনি মির্জাপুরে আধিপত্য কেন্দ্রিক হামলা-পাল্টা হামলায় আতঙ্ক

হলদে পাখির গল্প- মনিরা মিতা

  • আপডেট টাইম : Monday, July 13, 2020
  • 930 বার

হলদে পাখির গল্প

মনিরা মিতা

উদাস মনে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আবীর। বিকালে সোনারোদ ঝরে পড়ছে। সবাই বাইরে খেলা করছে। অথচ আবীর ঘরে বন্দি। তার বাবা খুব কড়া মানুষ। আবীরের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল একটু খারাপ। এটা নিয়ে বড্ড ক্ষেপেছে ওর বাবা। বাবার হুকুম, আগে পড়া তারপর খেলা।

আবীর বই খুলে বসে থাকে। তবে তার মন থাকে খেলার মাঠে। আবীরের জানালার পাশে একটা পেয়ারা গাছ। সবুজ পাতায় ভরা গাছটা খুব পছন্দ ওর। আবীরের ইংরেজি বই খোলা পড়ে আছে। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সে। ইংরেজিতে একটু দুর্বল। ইংরেজি বই পড়তে বসলেই অক্ষরগুলো প্রজাপতি হয়ে উড়ে উড়ে বেড়ায়। আবীর সেই প্রজাপতিগুলো চেয়ে চেয়ে দেখে। কিন্তু ধরতে পারে না।

এমন সময় আবীরের মা আসে। হাতে তার দুটি পাকা কলা। আবীর কলা দুটো নেয়। আবীর একটা কলা খায়। এমন সময় একটা হলুদ রঙের পালক ঘুরে ঘুরে আবীরের বইয়ের ওপর পড়ে। আবীর অবাক হয়। এতো সুন্দর পালক আবীর আগে কখনও দেখেনি। কী সুন্দর পালকটি! গাঢ় হলুদ রঙের তুলতুলে পালক নিয়ে খেলা করে আবীর।

এমন সময় জানালার দিকে তাকায় আবীর। কী দেখছে সে, একটা হলুদ রঙের টিয়া! আবীর মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে টিয়াপাখির দিকে। ওর মনে হয় স্বপ্ন দেখছে। পাখিটা জালনার ওপর দাঁড়িয়ে লেজ নাড়িয়ে নাচে। তারপর ছোঁ মেরে কলা নিয়ে উড়ে যায়। আবীর অবাক হয়ে  চেয়ে থাকে।

আবীর হলুদ পাখিটার কথা ওর মা-বাবাকে বলে কিন্তু কেউ ওর কথায় গুরুত্ব দেয় না। পরের দিন সকালে আবীর আবার বই খুলে বসে আছে। একটা বাটিতে মুড়ি দিয়ে গেছে ওর মা। আবীর আপন মনে মুড়ি যাচ্ছে আর হলুদ পাখিটার কথা ভাবছে। এমন সময় কোথা  থেকে যেন পাখিটা এলো। জানালার ওপর বসে লেজ নেড়ে নাচতে লাগল। এরপর বাটিতে  ঠোকর দিয়ে মুড়ি খেয়ে পালাল।

আবীর আর হলুদ পাখিটা এখন বন্ধু। আবীর রোজ সকাল-বিকাল পাখিটার অপেক্ষায় থাকে। পাখিটা এসে শিস দিয়ে গান শোনায়। আবীর তাকে মুড়ি, কলা, মটর এসব খেতে  দেয়। পাখিটা  নেচে নেচে খায়। তারপর লেজ দুলিয়ে উড়ে যায়। মাঝে মাঝে পাখিটার হলুদ পালক খসে পড়ে। আবীর পালকগুলো জমিয়ে রাখে। মাঝে মাঝে পালকগুলো বের করে খেলা করে। পালকগুলো বাতাসে উড়ে উড়ে বেড়ায়। আবীরের তখন মনে হয় অনেকগুলো হলুদ রঙের পাখি উড়ে ওপরে উঠছে আর নামছে।

আবীর আর হলুদ টিয়ার মধ্যে খুব ভাব এখন। আবীর ওর নাম দেয় হলদে বন্ধু। হলদে টিয়াটা মাঝে মাঝে আবীরে কলম নিয়ে উড়াল দেয়। কিছুক্ষণ পর আবার ঠাস করে কলমটা  ফেলে দেয় আবীরের খাতায় ওপর। তারপর কিচমিচ শব্দে কিছু বলে আবীরকে। ওর ভাষা না বুঝলেও আবীর এটা বোঝে যে হলদে পাখি ওর সাথে খেলা করে খুশি হয়। এভাবেই চলতে থাকে ওদের বন্ধুত্ব।

আজ সকাল থেকে আবীর ওর জন্য মুড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু পাখিটা আসছে না। জানালা দিয়ে আবীর বারবার উঁকি দিচ্ছে। পেয়ারার কঁচি-কঁচি পাতার ফাঁকে চোখ বুলায় সে। পাখিটার দেখা নেই। একটা মোরগ কড়কড় শব্দ করে কিছুদূর উড়ে আবার নেমে যায়। একটা মুরগী আটটি ছানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তুলতুলে মুরগীর বাচ্চাগুলো তুলোর বলের মতো মনে হচ্ছে আবীরের। এসব দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয় সে। এমন সময় হলদে বন্ধু আসে। আজ খুব অস্থির লাগে ওকে। কেমন যেন কাইকুই শব্দ করে। অস্থির পায়চারি করে জানালার কার্নিশে। আবীর মুড়ি এগিয়ে দেয় কিন্তু হলদে বন্ধু খায় না। তারপর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আবীরের দিকে। ওর চোখের গভীরে কী যেন লুকিয়ে আছে। আবীরের মনটা চঞ্চল হয়ে ওঠে। হলদে বন্ধু ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যায়। ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে আবীর।

হলদে বন্ধু কেন এমন করছিল? ওর কি কোনো বিপদ হয়েছে? এসব ভেবে স্কুলেও মন দিয়ে ক্লাস করতে পারে না আবীর।

বিকেলে আবীর হলুদ টিয়ার অপেক্ষায় বসে থাকে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়। হলদে বন্ধু আর আসে না। আবীরের দুচোখ ভেঙে কান্না পায়। বুকটা কেমন যেন খালি খালি লাগে। পরদিন সকালেও পাখিটা আসে না। আবীর অস্থির হয়ে অপেক্ষা করে। বিকেলেও মন খারাপ করে বসে থাকে আবীর। জানালা দিয়ে হলদে পাখির জন্য তাকিয়ে থাকে সে।

আবীরের মা জোর করে ওকে খেলতে মাঠে পাঠায়।  আবীর বন্ধুদের কাছে এসেও নিশ্চুপ হয়ে থাকে। এমন সময় রুবেল বলে কাল খুব মজা লেগেছিল পাখিটার মাংস। আবীরের বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। কোন পাখির কথা বলছে রুবেল!

রুবেল বলে, পাখিটা ধরার জন্য সুমন ভাই কয়েকদিন থেকেই চেষ্টা করছিল। কাল বিকেলে ফাঁদে ফেলতে পেরেছে অবশেষে। হলুদ পাখিটা দেখতেও যেমন সুন্দর খেতেও তেমন সুস্বাদু। রাস্তার পাশে এখনও হলুদ পালকগুলো পরে আছে। কথাটা শুনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে আবীর। এক দৌঁড়ে রাস্তার পাশে চলে যায়। এখানে পড়ে থাকা হলদে পাখির পালকগুলো দেখে মাটিতে বসে পরে সে।

পালকগুলো তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে। পাখিটার জন্য তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। গতকাল তাহলে এরাই হলদে বন্ধুকে তাড়া করেছিল। তাই ওমন অস্থির ছিল হলদে বন্ধু। হয়তো আবীরের সাথে দেখা করতে আসত বলেই ওকে দুষ্টু ছেলেগুলো নিজেদের শিকার বানাতে  পেরেছে। আবীরের বন্ধুত্বের জন্য হলদে বন্ধু রোজ ছুটে আসত।

আবীর হলদে পাখির পালকগুলো নিয়ে একদৌঁড়ে ঘরে চলে আসে। দরজা বন্ধ করে পালকগুলো আকড়ে ধরে কাঁদে। খুব কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি ওঠে ওর।

আবীরের যখন খুব মন খারাপ হয়, তখন সে হলদে বন্ধুর পালকগুলো বের করে। পালক গুলো ওপরে তুলে ছেড়ে দেয়। পালকগুলো বাতাসে উড়ে উড়ে ওপরে ওঠে আর নামে। আবীরের মনে হয়, ওগুলো হলদে বন্ধুর পালক নয় বরং হলদে বন্ধুটাই। আবীর মুগ্ধ নয়নে  চেয়ে থাকে তার হলদে বন্ধুটার দিকে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Mirzapurpratidin এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ভিডিও বা ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি
Site Customized By NewsTech.Com