নিনিতের পুতুল বিয়ে ও করোনা ভূত- বেণীমাধব সরকার

শিরোনামঃ

প্রচ্ছদ

কিচিমিচি, ফিচার শিরোনাম

নিনিতের পুতুল বিয়ে ও করোনা ভূত- বেণীমাধব সরকার

আপডেট টাইম : Saturday, November 28, 2020
1464 বার

আজকে নিনিতের পুতুল বিয়ে। নিনিতের পুতুলটি হাসতে পারে নাচতে পারে গাইতে পারে। পাড়ার বন্ধুরা সবাই জুটেছে নিনিতের পুতুল বিয়েতে ঘটা করে মজা করবে। সোমা রুমা নিনিতের বান্ধবী। দুইজনে মিলে পরামর্শ করছিল পুতুল বিয়ের উৎসবে কী কী করা যায়। ওদের ইচ্ছা, সবাইকে একটা সারপ্রাইজ দেবে।
সোমা বলছে, আমি বাঘের সং সাজব আর তুই আমার সঙ্গী হয়ে থাকবি। দুইজন গিয়ে বিয়ের আসরে হঠাৎ হানা দিয়ে সবাইকে ভড়কে দেবো । আমাদের দেখে আর বন্ধুরা ওরে মা-রে বাবা-রে বলে যখন ছুটে যাবে, তখন বিয়ের মিঠাই ম-া সবই আমরা খেয়ে নেব।

যে কথা সেই কাজ, একজন সাজল বাঘ আর একজন সাজল সিংহ। গায়ে পাটের আঁশ লাগাল আর সিংহের ঘাড়ে মুখম-লে লাগাল কেশর। একদম দিব্যি বাঘ ও সিংহ হয়ে গেল।
বাঘ-সিংহ সচরাচর একসঙ্গে থাকে না কিন্তু অত শত তলিয়ে দেখার সময় যে ওদের নেই। বিয়ের পূর্ণ আসরেই যে ওদের গিয়ে হাজির হতে হবে। মিঠাই ম-া সন্দেশ রসগোল্লার লোভে জিভের পানি টলটল করছে। আর যে বেশি দেরি করা যায় না।
নিনিতের সব বন্ধুরা এসে হাজির হয়েছে। গায়ে হলুদ পর্ব শেষ করে কাজির কবুলের পর্বও শেষ। এখন শুরু হবে খাওয়াদাওয়ার পালা।

এমন সময় বাঘের হালুম আর সিংহের গর্জন। হালুম আর গর্জন যে সেরকম হচ্ছে না। হবেই বা কী করে? ওরা ভো আর আসল বাঘ নয় আসল সিংহও নয়। তারপরে যে-ই হালুম আর গর্জন শুনেছে, বন্ধুরা তো সবাই চমকে উঠেছে। কে আর আসল নকল বিচার-বিশ্লেষণ করতে যাবে, সবাই চিৎকার করতে করতে দে ছুট! যে যেভাবে পারে পড়িমড়ি করে দৌড়।
নিনিতের পুতুল, নিনিতের বাড়ি। সে তো আর সব ফেলে যেতে পারে না। ভয়-ডর যাই হোক, চোখমুখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত কামড়ে পড়ে রইল নিনিত। পুতুল যদি ভয় পায়!
সবাই পালালেও অদূরে ভূতের মত কালো কুচকুচে একটি জন্তু ঠায় বসে রয়েছে। একটুও নড়চড় নেই। কোনো ভয়ও নেই।
বাঘ সিংহ বেশধারী সোমা রুমা কিন্তু এ দৃশ্য দেখে অবাক! কারণটা কী? সবাই ষেখানে দৌড়ে পালাল, সেখানে কালো হেন অদ্ভুত জন্তুটি কেন পালাচ্ছে না? দুজন ওটার দিকে এগিয়ে গেল। ওরা ভেবেছিল বাঘ সিংহের মূর্তি দেখে হয়তো অদ্ভুত প্রাণীটি পালিয়ে যাবে। কিন্তু না ,পালাল না। বরং ওদের প্রতি তেড়ে এলো। গম্ভীর গলায় বিকৃত স্বরে বলল, ওরে, তোরা কারা? আমার আহার নষ্ট করে দিলি? দূরে বসে বসে আমি ভাবছিলাম, যখন সবাই একসাথে হবে, গোগ্রাসে সব খাবার গিলতে থাকবে, তখন আমিও গিয়ে ওদের আঁকড়ে ধরব। আর তোরা সব ভ-ুল করে দিলি। আমার
মুখের খাবার কেড়ে নিলি। তোদেরকে এখন আমি খাব। এই বলেই কালো জন্তুটি ওদের দুই বান্ধবীর দিকে এগিয়ে এলো। কিন্তু কোনো সুবিধা করতে পারল না। কারণ, ওদের দুইজনের মুখেই মুখোশ পরা। একজনের বাঘের, আরেক জনের সিংহের। দৈত্যটা নখর তুলে হাত বাড়ালেও বাদ সাধল
ওদের মুখোশ। মুখোশ পরা থাকায় ওদের আর আক্রমণ করতে পারল না। সোমা রুমার বুঝতে বাকি রইল না যে এ সেই করোনা ভূত। ওৎ পেতে আছে, সবাই যখন একত্রিত হবে তখন আক্রমণ করবে। সেই ফিকিরেই অপেক্ষা করছিল। কিন্তু সোমা রুমার জন্য পারল না।
ওরা দুইজনই তেড়ে গেল করোনা ভূতের দিকে। ওকে কিন্তু ছোঁয়া যাবে না । দূরে থেকে ভয় দেখিয়ে সাহসের সঙ্গে তাড়িয়ে দিতে হবে। বুকে বল রাখতে হবে, স্বাস্থ্য বিধি মেনেই ওদের তাড়ানো সম্ভব। তাই ওরা মুখোশ পরা অবস্থাই হালুম হালুম করে ওর দিকে এগিয়ে গেল। করোনা ভূত চিন্তা
করল, তাকে দেখে সবাই পালায়। আর ওরা না পালিয়ে দুঃসাহসের সঙ্গে তেড়ে আসছে ওর দিকে। ওদের সাহস তো কম নয়! ওদের তো আক্রমণ করা যাবে না। ভয় পেয়ে করোনা ভূত তারস্বরে চিৎকার করতে করতে দিল দৌড়। পড়ি মরি করে সেও এখান থেকে পালিয়ে গেল।

এইবার সোমা রুমা ছদ্মবেশ খুলে ফেলল।

অদূরে নিনিত বসে বসে সব দেখছিল। যখন দেখল ওই বাঘ-সিংহ আর কেউ নয় সোমা ও রুমা। তখন কাছে এসে নিনিত বলল, ভাগ্যিস এই সময়ে তোরা এসে পড়েছিস নইলে আজ কী যে বিপদ হতো, বলা যায় না! আমরা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেতাম। এরূপ জনসমাগম আর করা যাবে না।
পুতুলের বিয়ে তো হয়েই গেছে। সব বান্ধবীকে ডেকে এনে বলল, দেখো, আমরা ভীষণ ভুল করে এক মহাবিপদের মধ্যে যাচ্ছিলাম। করোনাকে আক্রমণের সুযোগ করে দিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছিলাম।
সোমা রুমাকে অনেক ধন্যবাদ। ওরাই আমাদের করোনা ভূতের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তোমরা সবাই যার যার ঘরে চলে যাও। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে চলবে। মুখোশ পরে বাইরে আসবে। আর যে কোনো অনুষ্ঠানে এরূপ একত্র হয়ে খানাদানা করা যাবে না। এইভাবে আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়ব। ওরা যখন দেশ ছেড়ে চলে যাবে, তখন আমরা আবার আনন্দ উৎসব করে অনুষ্ঠান করব ।
সবাই বিষয়টা বুঝতে পারল। আর জনসমাগম না করে সবাই যার যার মতো বাড়ি চলে গেল।