বাবা দিবসের কথা
-আবেদীন জনী
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস পালিত হয়। সে হিসেবে এবার বাবা দিবস হচ্ছে ২১ জুন। পিতার প্রতি সন্তানের বিনম্র শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে বাবা কি শুধুই একটি বিশেষ দিনের জন্য? যে বাবা বছরের পর বছর শ্রমে-ঘামে-স্নেহে ছোট্ট সন্তানকে বড়ো করে তোলেন, তাঁকে বছরে মাত্র একদিন শ্রদ্ধা- ভালোবাসা জানালে হবে? তাকে তো সারা বছর, প্রতিটা মুহুর্ত হৃদয় দিয়ে ভালোবেসে যাওয়া উচিৎ। এরকম অনেক বিতর্ক রয়েছে দিবসটি ঘিরে। কিন্তু সব বিতর্ক পাশ কাটিয়ে অনেকেই করে থাকে জমকালো আয়োজন। বাবা আর সন্তানের নানারকম উপহার দেওয়া-নেওয়ার মধ্য দিয়ে দিনটি অন্য রকম আনন্দময় হয়ে ওঠে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বাবা দিবসের সূচনা হয়। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই, আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। কিন্তু ১৯০৯ সালে সনোরা স্মার্ট ডোড নামের ওয়াশিংটনের এক মহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের ধারণা আসে। ডোড এই ধারণাটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে। সেই পুরোহিত মাকে নিয়ে খুব ভালো ভালো কথা বলছিলেন। ডোড তখন ভাবে, বাবাদের নিয়েও তো নতুন কিছু করা যায়। ডোড নাকি তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অথর্যাৎ, ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।
বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয় দিবসটি। এদিন ছেলেমেয়েরা তাদের বাবাকে কোনো না কোনো উপহার দিতে খুব পছন্দ করে। আর বাবারাও ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে উপহার পেয়ে আনন্দিত হন। কোনো কোনো দেশে বাবাকে কার্ড বা ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আবার কোথাও কোথাও বাবাকে সন্তানেরা নেকটাইও উপহার দেয়। অনেকে আবার বাবা দিবস উপলক্ষে কেক কাটার আয়োজন করে। কেকের ওপর লেখা থাকে- লাভ টু ফাদার।
থাইল্যান্ডে বাবা দিবস পালন করা হয় রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের জন্মদিনে। ৫ ডিসেম্বর। তাকে দশটির জনক বলে মনে করা হয়। এদিন সবাই পরে হলুদ রঙের কাপড়।
বাবা দিবসে মেক্সিকো সিটিতে তেরো মাইল লম্বা একটি দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। যাকে বলা হয় ক্যানেরা ডিয়া ডেল পেড্রো। বাবাদের সঙ্গে দৌড়ে অংশ নেয় সন্তানরাও।
নেপালের ছেলেমেয়েরা এই দিনে তাদের পিতামাতাকে কিনে খাওয়ায় মজার মজার খাবার। বিশেষ করে মিষ্টান্ন দ্রব্য। বাবার কাছ থেকে তারা নেয় আশীর্বাদ। যাদের বাবা নেই। মারা গেছেন। তারা সেই সমাধিস্থলে গিয়ে বাবাকে স্মরণ করে। বাবার জন্য প্রার্থনা করে।
আর ফ্রান্সের রীতি হলো, বাবা জীবিত থাকলে তাকে লাল গোলাপ উপহার দিয়ে সম্মান ও ভালোবাসা জানানো হয়। কিন্তু বাবা যদি মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে তার সমাধিতে সাদা গোলাপ রেখে আসা হয়।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাবা দিবস। এদেশে বেশির ভাগ খোকাখুকিরা বাবাকে ফুল উপহার দিয়ে ভালোবাসা জানায়। কেউ কেউ বাবার ছবি এঁকে বাবাকে উপহার দেয়। বড়ো হয়ে ওঠা মেয়েরা বাবাকে রান্না করে খাওয়ায় পিঠে-পায়েশসহ নানান কিছু। ছেলেরা উপহার দেয় রঙিন টি-শার্ট।
সন্তানের শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় সার্থক হয়ে ওঠে বাবার জীবন।
Leave a Reply