মো. সাজজাত হোসেন ও মো. জোবায়ের হোসেন
মেঘলা আকাশ, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, রাস্তায় অন্ধকার। ক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে বাড়ি ফিরছিলেন কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী। ক্ষোভের কারণ জানতে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। তাদের ভাষ্য, কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য সকাল ৯ টা থেকে রাত ৭.৩০টা পর্যন্ত কলেজের অভ্যন্তরে থাকতে বাধ্য করা হয় তাদের। এই সময়ের মধ্যে তাদেরকে কোন খাবারও সরবরাহ করা হয়নি এমনকি খাবারের জন্য বাইরেও বের হতে দেওয়া হয়নি।
ঘটনা জানতে এগিয়ে যাই শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের প্রধান ফটকে। সেখানে হট্টগোল। দারোয়ানের সাথে বাকবিতন্ডা করছেন একদল অভিভাবক। কারণ গেইট খোলা বারণ।
কলেজ গেটের সামনে মেয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকা উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের বড়দাম গ্রামের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কিসের অনুষ্ঠান। আমার বাড়িতে সবাই মেয়ে নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়ে গেছে । প্রতিবেশীরা উল্টা পাল্টা ভাবছে। আমাদের না জানিয়ে রাত পর্যন্ত কিসের অনুষ্ঠান, এটা চরম বাড়াবাড়ি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খাবারতো দূরের কথা এক গ্লাস পানিও দেয়া হয়নি ।’ ‘অন্ধকার হয়ে গেছে তারমধ্যে বৃষ্টি । বাসে করে যেতে হবে চিন্তায় আছি।’
স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করা এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা সারাদিন স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করলাম তারাই কোন খাবার পাইনি আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা কি পাবে।
জানা গেছে, শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ঘিরে এই উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (৩১ জুলাই) সকাল ১১ টা ও পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করে দুপুর দেড় টায় এই অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু করতে করতে বিকেল এবং শেষ হতে রাত ৭.৩০টা বেজে যায়।
এদিকে অনুষ্ঠান শেষ করতে রাত হওয়ার বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। বলেন মানসম্মান নিয়ে চাকুরি জীবন শেষ করতে পারলে বাঁচি। এই অনুষ্ঠানের ব্যপ্তিকাল ও শিক্ষার্থীদের কলেজ অভ্যন্তরে আটকে রাখায় বিব্রত বোধ করলেও মুখ খুলতে সাহস করেননি কলেজের কেউই।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ১৩৬,টাঙ্গাইল-০৭ ( মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম।
শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) তাহমিনা জাহান বলেন, অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে আমি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমার কাছে অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ ছিলোনা। তবে গেইট বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আসলে বহিরাগতদের কলেজে প্রবেশ ঠেকাতে গেইট বন্ধ রাখা হয়েছিলো।