অনেক অনেক দিন আগে এক গ্রামে বাস করত এক শিকারি। তার নাম ছিল আজাকাসি। সেই গ্রামে আরও অনেক শিকারি বাস করত। তারা একেক জন একেক ধরনের অস্ত্র দিয়ে শিকার করত। কোনো কোনো শিকারি বন্দুক ব্যবহার করত। কেউ ব্যবহার করত তীর-ধনুক। অন্যরা লাঠি ও কাটারি দিয়েও শিকার করত।
একদিন খুব সকালে আজাসাকি শিকারে গেল। সে শিকারের খোঁজে একেবারে বনের গভীরে চলে গেল। সারা দিন সে শিকার খুঁজে বেড়াল। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করল, বন যেন শূন্য মরুভূমি। বিকেল পর্যন্ত অনেক খোঁজাখুঁজি করে সে একটি পাখিও কোথাও দেখতে পেল না। সে ভীষণ ক্ষুধার্ত আর ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অবশেষে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। যেই না সে পিছন ফিরে ঘুরে দাঁড়াল অমনি দূর কোথাও থেকে অস্বাভাবিক আওয়াজ তার কানে ভেসে এলো। সে খুব সতর্কভাবে শুনল, ভেবে দেখল, সে শুনছে- পিঃ… পিঃ… পিঃ… গ্রো… গ্রো… গ্রো…।
সে নিজেই নিজেকে বলল, এই শব্দটা বড় কোনো প্রাণীর, সম্ভবত এটা সিংহও হতে পারে। আমাকে খুব সতর্কভাবে নিঃশব্দে চলতে হবে এবং দেখতে হবে প্রাণীটিকে খুঁজে পাই কি না। এই বলে যেদিক থেকে শব্দটা এসেছিল সেই দিক লক্ষ্য করে সে চলতে লাগল। শিগগিরই সে বনের মধ্যে গাছ কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে এমন একটা খোলা জায়গায় এসে পড়ল। এই খোলা জায়গায় দেখতে পেল একটা বড় গর্ত। সে খুব সতর্কতার সঙ্গে নিঃশব্দে এর কাছাকাছি গেল। বকের মতো গলাটা একটু লম্বা করে এমনভাবে তাকাল যেন গর্তের ভেতরে কী আছে তা দেখতে পায়। তো সেখানে সে কী দেখতে পেল?
সে দেখল, একটা সিংহ!
দ্রুত সে পিছনে সরে এলো। উত্তেজনা কিছুটা কমে এলে সে আবার গর্তের কাছাকাছি গেল। বকের মতো গলাটা একটু লম্বা করে তাকাল যেন গর্তের ভেতর কী আছে দেখতে পায়। সে ওই একই গর্তের ভেতর দেখতে পেল একটা সাপ! সে আরও দেখল, একটা মানুষ গর্তের এক কোনায় কুকড়ি-মুকড়ি লেগে পড়ে আছে। আজাকাসি তাকে কোনো সাহায্য করতে পারল না। কিন্তু সে বিস্মিত হলো! অবাক হয়ে ভাবল, ওখানে কী ঘটেছে! সিংহ মানুষটাকে খাচ্ছে না কেন?
সে দেখল, ওখানে একটা ইঁদুরও আছে। সে নিজের দৃষ্টিকে বিশ্বাস করতে পারল না। ওখানে গর্তের মধ্যে পড়ে আছে একটা সিংহ, একটা বড় সাপ, একটা মানুষ এবং একটা ইঁদুর। কিন্তু সিংহটি কাউকেই খাচ্ছে ন। এ তো অবাক ব্যাপার! সিংহটিই প্রথম তাকাল আজাকাসির দিকে। বলল, ওহে শিকারি! দয়া করে আমাকে এই গর্ত থেকে বের করো! আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত!
আজাকাসি মাথা ঝাঁকাল। ভয়ে শিউরে ওঠা কণ্ঠে বলল, আমি সত্যিই খুব দুঃখিত, সিংহ! আমি তা করতে পারব না। তুমি একটি ক্ষুধার্ত সিংহ, আমি তোমাকে কীভাবে বের করে আনি? আমি নিশ্চিত, তোমাকে বের করে আনামাত্রই তুমি আমাকে খাবে।
এর জবাবে সিংহ গর্জন করে উঠল। বলল, তুমি কি ভাবছ না, এই মানুষটিকে আমি এখানে খেয়ে ফেলতে পারি? কিংবা এই সাপ বা ইঁদুরটিকেও খেয়ে ফেলতে পারি? আমরা সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেউ একে অপরকে খাব না। বরং পরস্পর অনুগত ও বিশ্বস্ত থাকব, যাতে আমরা সবাই এখান থেকে বের হতে পারি। আমি অঙ্গীকার করছি, আমাদের সাহায্য করলে তুমি অবশ্যই নিরাপদ থাকবে।
গর্তে আটকে পড়া লোকটি সিংহের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলল, হে শিকারি! আমাদের বিশ্বাস করুন, সিংহটি সত্য কথা বলছে। আমাদের এখান থেকে বের করুন। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। সাপটাও ওর সঙ্গে হিস্হিস্র করে সায় দিল। ইঁদুরটাও চিঁ চিঁ শব্দ করতে লাগল। এতে শিকারির মন গলে গেল। শিকারি বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি তোমাদের সাহায্য করব। তোমরা অপেক্ষা করো, আমি কিছু একটা খুঁজে আনি।
সে বিভিন্ন গাছে খুঁজে দেখল, ওদের উদ্ধার করার জন্য কিছু খুঁজে পাওয়া যায় কি না। অবশেষে খুঁজে পেল সবচেয়ে লম্বা শক্তপোক্ত একটি দড়ি। এর এক প্রান্ত বাঁধল একটা লম্বা গাছের সঙ্গে। তারপর খুব জোরে টেনে টেনে পরীক্ষা করে দেখল। সে যখন নিশ্চিত হলো ওদের গর্ত থেকে তোলার জন্য দড়িটা যথেষ্ট শক্ত, তখন দড়ির খোলা প্রান্ত গর্তের ভেতর ছুড়ে দিলো। কে প্রথমে বাইরে আসবে? অবশ্যই প্রথমে সিংহ, তারপর উপরে উঠে আসবে সাপ, তারপর ইঁদুর এবং সব শেষে মানুষটি। এভাবে প্রত্যেকেই উপরে উঠে এলো। উপরে উঠে এসেই সিংহটি আজাকাসির সঙ্গে জোরেসোরে করদর্মন করল। আজাকাসি ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, উহঃ তুমি আমাকে ব্যথা দিয়েছ। তোমার সঙ্গে করমর্দন করা, সত্যিই বেদনাদায়ক। এভাবে তুমি আমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছ?
না, না, না, সিংহ বলল। এ উপকারের জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ শিকারি। শিগগিরই আমাদের দেখা হবে। এই বলে সিংহ জঙ্গলে হারিয়ে গেল। সাপ তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে গেল। মানুষটি ধন্যবাদ দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।
সবশেষে তাকে ধন্যবাদ দিলো ইঁদুর। বলল, আমি তোমার দয়ার কথা ভুলব না। তারপর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলল।
এরপর আজাকাসি একাই রয়ে গেল। চারদিক অন্ধকার হয়ে এলো। ক্ষুধা লেগেছে খুব, তাও এতক্ষণে টের পেল। তাই সে ঘরে ফেরার জন্য গ্রামের পথে হাঁটতে লাগল।
কয়েকদিন পর, খুব সকালে, এমন কি দিগন্তে তখনো সূর্য উঁকি দেয়নি, এমন সময়ে সে শুনতে পেল কেউ একজন জোরে জোরে দরজায় কড়া নাড়ছে। আর আওয়াজ আসছে- ভুম… ভুম… ভুম…।
আজাকাসি জিজ্ঞেস করল, কে ওখানে? কিন্তু কোনো জবাব নেই। সে দরজা খুলল। দেখল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি সিংহ। ভয়ে তার হাড়-মজ্জা অবধি কেঁপে উঠল। প্রায় ধাক্কা দিয়েই সজোরে দরজা বন্ধ করে দিলো। কিন্তু সিংহ তাকে থাবা উঁচিয়ে অভিবাদন জানাল। তখন আজাকাসি সিংহের কাছে গিয়ে বলল, তুমি সত্যিই আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।
সিংহ বলল, আমি এজন্য দুঃখিত। আমার মনে হয়, দিনের আলোয় আমি এখানে ভালোভাবে আসতে পারব না। আমি কি এই রকম সময়ে আসতে পারি?
আজাকাসি সিংহের প্রস্তাবে সম্মতি দিলো, নিশ্চয়, তুমি এমন সময়ে আসতে পারো।
সিংহ বলল, ঠিক আছে। একদিন তুমি আমার জন্য বিস্ময়কর কিছু করেছিলে, তুমি আমাদের চারজনকে গর্তের বাইরে বের করে এনে প্রাণে বাঁচিয়েছিলে, সাহসের পরিচয় দিয়েছিলে। তাই আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতে এসেছি। আমার সঙ্গে একটু বাইরে এসো।
সিংহ পেছনে সরে দাঁড়াল। আজাকাসি বাইরে এলো। ঘরের সামনে সে দেখতে পেল, বন্যপ্রাণীর অনেক মাংস স্তূপ করে রাখা আছে।
সিংহ বলল, এসব মাংসই তোমার জন্য। নাও, এখন খাও-দাও, ঘুরে বেড়াও।
আজাকাসি খুব খুশি! সে তাড়াতাড়ি কাজে বসে গেল। মাংসগুলো পরিষ্কার করল, কেটেকুটে টুকরো টুকরো করল। এর কিছু অংশ সে ঘরে রেখে দিলো। বাকিটা শহরে নিয়ে গেল বিক্রির জন্য। এগুলো বিক্রি করে সে অনেক টাকা পেল। এর মধ্যে কয়েক দিন চলে গেছে। একদিন খুব সকালে আগের মতোই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে জেগে উঠল। সে সাবধানে দরজা খুলল। দেখল, সেই সিংহ আবার দাঁড়িয়ে আছে। সিংহ তাকে আগের জায়গায় নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিল, আগের চেয়েও অনেক বেশি মাংস ওখানে স্তূপ করে রাখা আছে। আজাকাসি মাংসগুলো পরিষ্কার করল, কেটে-কুটে বাজারে নিয়ে গেল বিক্রির জন্য। সে এবার আগের চেয়ে বেশি টাকা পেল। আশ্চর্যের বিষয়, সিংহটা তিন-চার দিন পরপর আরও বেশিবেশি মাংস নিয়ে আসতে লাগল। মাংস বিক্রি করে আজাকাসি অনেক ধনী হয়ে গেল। সে এখন ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন ও অন্যান্য খরচ দিতে পারে। সে একটা নতুন ঘর বানাল। নিজের ও পরিবারের অন্যদের জন্য নতুন পোশাক কিনল। এখন সে খুব সুখী একজন মানুষ।
এরপর একদিন আজাকাসি লক্ষ্য করল, তার নতুন ঘরের চালে একটি ছিদ্র। ওহ্ এটা কী? আঁৎকে উঠল সে। পরীক্ষা করতে দেখতে চলে গেল চালে। সে অবাক হয়ে দেখল, গর্তের ভেতর একটা ইঁদুর চিঁ চিঁ করছে। আজাকাসি বলল, এই তুমি কে? আমার ঘরের চালে কী করছ? চালে গর্ত করেছ কেন?
ইঁদুর বলল, আমাকে চিনতে পারছ না? এখন থেকে কিছু দিন আগে জঙ্গলের ভেতর একটা গর্ত থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার করেছিলে। তুমি যদি না আসতে, আমি নিশ্চিত, সিংহ আর সাপ আমাকে খেয়ে ফেলত। তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে তোমার জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। এক মিনিট এখানে অপেক্ষা কর।
আজাকাসি নির্বাক হয়ে গেল, সে দেখল, ইঁদুরটা অদৃশ্য হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যেই আবার ফিরে এলো, টেনে-হিঁচড়ে একটা বিরাট বস্তা নিয়ে সে সেটা চালের ছিদ্র দিয়ে আজাকাসির পায়ের সামনে ফেলল। ইঁদুর বলল, এ জিনিসগুলো নাও, এগুলো আমার পক্ষ থেকে তোমার উপকারের প্রতিদান।
এরপর সে যেভাবে দ্রুত এসেছিল সেভাবে দ্রতই অদৃশ্য হয়ে গেল। আজাকাসি দ্রুত হেঁচকা টান মেরে বস্তাটা হাতে নিল এবং খুলে ফেলল।
এর ভেতরে কী আছে তা দেখে তো সে প্রায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। বস্তাটা সোনা, হীরা, মণি, মুক্তা এবং অনেক দামি দামি পাথরে পূর্ণ।
সারা গ্রামের মধ্যে আজাকাসি এখন ধনী ব্যক্তি। শুধু গ্রামপ্রধান তার চেয়ে একটু বেশি ধনী। কয়েক মাস পর, গ্রামপ্রধানের বাড়িতে চুরি হয়। গ্রামপ্রধান ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে চোর দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। তারা সব কিছু নিয়ে যায়। গ্রামপ্রধান বাড়িতে ফিরে এসব দেখে খুব দুঃখ পান। তিনি বেশ কয়েকদিন কান্নাকাটি করেন। ওই অঞ্চলের সবাই তাকে সান্তনা জানাতে আসেন। আজাকাসিও কয়েক খন্ড স্বর্ণ নিয়ে তাকে দেখতে যান।
আজাকাসি জঙ্গলের ভেতর গর্ত থেকে যে মানুষটিকে উদ্ধার করেছিল সে গ্রামের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। সে গ্রামপ্রধানের বাড়িতে গেল। তার কাছে চুরি সম্পর্কে কিছু তথ্য আছে, এই কথা বলে গ্রামপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে চাইল। গ্রামপ্রধান তাকে নিজের খাসকামরায় নিয়ে বসাল। তখন সে খুব দুঃখিত ও কান্নাজড়িত অবস্থায় ছিল। সে ওই লোককে কোনো কিছু গোপন না রেখে চুরি সম্পর্কে যা কিছু জানে তা বলতে বলল। সেই লোকটি বলল, না না, তুমি কান্না করো না। সোনাদানা ও মূল্যবান জিনিসপত্র, দামি পোশাক-আশাক কে নিয়ে গেছে তা আমি জানি।
গ্রামপ্রধান চিৎকার করে বলল, কে সেই লোক? কোথায় সে?
লোকটি বলল, তুমি চিন্তা করো না। সে গ্রামের মধ্যেই আছে। সে শিকারি আজাকাসি।
গ্রামপ্রধান ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ল। বলল, আজাকাসি? আমি বিশ্বাস করি না। সে একজন ভালো মানুষ।
লোকটি তার হাত উঁচুতে তুলে বলল, গ্রামপ্রধান, তুমি কি ভুলে গেলে, আজাকাসি ছিল একজন হতভাগ্য দরিদ্র শিকারি। আজ তাকে দেখ, সে নতুন একটি ঘর বানিয়েছে, ঠিক তোমার ঘরের মতোই বড়। নিজের ও পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক কিনেছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন ও অন্যান্য খরচ দিচ্ছে। সে এখন আর শিকারেও যায় না। তা সত্তেও প্রতি বেলায় তার খাবার টেবিলে মাংস থাকে। এগুলো সে কীভাবে করে? সেই একমাত্র ব্যক্তি যে তোমার সবকিছু চুরি করেছে।
গ্রামপ্রধান খুব রেগে গেল। সে কয়েকজন সৈনিককে ডাকল। আজাকাসিকে গ্রেফতার করে তার সামনে হাজির করার নির্দেশ দিলো। সৈনিকরা আজাকাসির বাড়িতে গেল। তাকে বেঁধে গ্রামপ্রধানের কাছে নিয়ে এলো। তাকে নির্মমভাবে পেটানো হলো। কীভাবে ধনী হলো তা সে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করল। কিন্তু যখনই সে বলতে চায় সিংহ তার জন্য মাংস নিয়ে আসত, তখনই সৈনিকরা তাকে আরও বেশি করে পেটাতে লাগল। যখনই সে উল্লেখ করল, ইঁদুর তার জন্য বস্তায় ভরে সোনা ও মূল্যবান ধাতু নিয়ে এসেছে, গ্রামপ্রধান চিৎকার করে বলল, যথেষ্ট হয়েছে, এবার মিথ্যাচার বন্ধ করো। ওকে গোপন প্রকোষ্ঠে বেঁধে রাখো, কাল সকালে ওকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে।
আজাকাসিকে গোপন প্রকোষ্ঠে বন্দি করে রাখা হলো। এমন এক অপরাধে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে, যা আসলে সে করেইনি। সে বুঝতে পারল আগামীকাল সকালে তার ফাঁসি হবে। এ ব্যাপারে তার কিছুই করণীয় নেই। অন্ধকার নেমে এলো। তাকে দেখতে আসা গ্রামের শেষ লোকটিও বাড়ি চলে গেল। এ সময় তার গোড়ালিতে অদ্ভুত অনুভূতি হলো। সে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল তার সামনে মেঝেতে বড় একটা সাপ গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আজাকাসি বলল, স্বাভাবিক অবস্থায়, আমি তোমাকে দেখে ভয় পেতাম। কিন্তু যেহেতু আগামীকাল আমার ফাঁসি হবে, তাই তোমাকে দেখে এখন আর উদ্বিগ্ন হচ্ছি না।
সাপটি বলল, ঠিক বলেছ, তুমি উদ্বিগ্ন হয়ো না। তুমি সম্ভবত আমাকে মনে করতে পারছ না। আমি সেই সাপ, যাকে কয়েক সপ্তাহ আগে জঙ্গলের ভেতর একটা গর্ত থেকে তুমি উদ্ধার করেছিল। আমি সেই উপকারের প্রতিদানে তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।
আজাকাসি বলল, ওহ্ তাই! এ আর তেমন কি! কিন্তু আমার মনে হয় একটু দেরি হয়ে গেল। কাল সকালে আমার ফাঁসি হতে যাচ্ছে। এমন এক অপরাধে আমার সাজা হয়েছে, আসলে যা আমি কখনো করিনি।
সাপটি বলল, সেটি আমরা দেখছি। আমি একটা পরিকল্পনা করেছি। আমি কিছু ওষুধ নিয়ে এসেছি, এগুলো তোমার বেল্টের লুকিয়ে রাখব। আমি জেনে গেছি গ্রামপ্রধানের খুব সুন্দরী একটি মেয়ে আছে।
আজাকাসি বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। মেয়েটি তার একমাত্র সন্তান।
সাপটি বলল, তাও ভালো, তার একটি সন্তান আছে। আমি তাকে ছোট্ট করে একটা কামড় দিয়ে বিষ ঢেলে দেব। সে বিষক্রিয়ায় মরে যাবে। কিন্তু ওই ওষুধটি হলো বিষনাশক। এটাই একমাত্র ওষুধ, যা ওকে বাঁচিয়ে তুলবে। তুমি যখন গ্রামপ্রধানের একমাত্র মেয়ের জীবন বাঁচাবে, সে তখন তোমার কাছে চিরঋণী হয়ে যাবে। তখন সে তোমকে হত্যা করতে চাইবে না।
এরপর সাপটি এঁকেবেঁকে গ্রামপ্রধানের শোয়ার ঘরের দিকে ছুটে চলল।
শিকারি ফিসফিস করে বলল, সাবধানে! ধরা পড়ো না।
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে। সূর্যের কিরণ পূর্ব আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে। আজাকাসি শুনতে পেল গ্রামপ্রধানের শোয়ার ঘর থেকে আর্তনাদ ভেসে আসছে। নারীরা বিলাপ করছে! ওঁহোও…! গ্রামপ্রধানের একমাত্র মেয়ে মরে গেল। ওহোঁও …! তাকে সাপে কেটেছে। ওহোঁও…! সাপটা ছুটে পালিয়ে গেছে। ওহোঁও…! এটা কেন হলো গো। ওহোঁও…!
লোকজন সব সেই ঘরের দিকে ছুটে চলেছে।
আজাকাসি চিৎকার করে তাদের বলল, আমি এই মেয়ের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারি।
একজন সৈনিক আজাকাসির দিকে ছুটে এলো। চিৎকার করে তাকে বলল, চুপ করো! তুমি একটা চোর।
আজাকাসি অনেক কাকুতিমিনতি করে বলল, আমি সত্যি বলছি। আমি সত্যিই মেয়েটির জীবন ফিরিয়ে দিতে পারি। তুমি গিয়ে গ্রামপ্রধানকে একথা বলো।
সৈনিকটি তার দিকে ঘৃণাভরে থুতু ছিটিয়ে চলে গেল। চেঁচিয়ে বলে গেল, চুপ থাকো!
সৈনিকটি গ্রামপ্রধানের ঘরের দৌড়ে যাচ্ছে। নিজে নিজেই ভাবল, বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়া লোকটি কি সত্যি বলছে? যদি সত্যি হয়, তো গ্রামপ্রধান তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে, তাকে পুরস্কৃত করবে নিশ্চয়। কাজেই একথা গ্রামপ্রধানকে বললে তার হারানোর কিছু নেই।
গ্রামপ্রধানকে প্রথমে যখন একথা বলা হলো যে, আজাকাসি তার মেয়ের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে, তখন সে তা শুনতে চায়নি। সে ভাবল, লোকটি ফাঁসি থেকে বাঁচতে চাইছে, তাই একথা বলছে। কিন্তু যখন সে তার মেয়ের মৃতদেহের দিকে তাকাল, সে মেয়ের শোকে পাগলপ্রায় বউয়ের দিকে তাকাল, তার মন বদলে গেল। সে ভেবে দেখল, ওর কথা শুনলে হারানোর কিছু নেই। বরং লাভ হতে পারে। সে তো জানে না, ওই শিকারি জঙ্গল থেকে কী গোপনবিদ্যা শিখেছে। হয়তো সে সত্যি বলছে, কে জানে তা! তাই সে আজাকাসির বাঁধন খুলে তার সামনে নিয়ে আসার হুকুম দিলো।
আজাকাসি মৃত মেয়েটির কাছে গেল। সে একটি পাত্র আর পানি চাইল। সাপটির দেওয়া ওষুধ পাত্রে ঢেলে নিল। ওষুধ ভালোভাবে মেশানোর জন্য আঙুল দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে লাগল। ওষুধ মিশে গিয়ে কোমল তরলে পরিণত হলো। সে এই তরল মসৃণ সুতি কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিল। এই তরল সে মৃত মেয়েটির নাকের ছিদ্রপথে ঢুকিয়ে দিলো। গ্রামপ্রধান, তার বউ ও সব সৈনিক তার কাজকর্ম দেখছিল।
আজাকাসি জানত, মেয়েটি বেঁচে না উঠলে, ওখানেই তাকে মরতে হবে।
কিন্তু মেয়েটির নাকে স্পন্দন দেখা গেল। তার নাকে শুড়শুড়ি লাগল। সে দুইবার আওয়াজ করে হাঁচি দিলো- হ্যাঁচ্চো… হ্যাঁচ্চো…।
গ্রামপ্রধান চিৎকার করে উঠল, সে হাঁচি দিয়েছে! সে হাঁচি দিয়েছে!
ধীরে ধীরে মেয়েটি চোখ খুলল। আনন্দে গ্রামপ্রধান লাফাতে লাগল। মেয়েটির মা মেয়েটির মুখের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সৈনিকরাও নাচতে শুরু করল।
মেয়েটি তার মাকে বলল, মা, আমি কোথায়? আমি ক্ষুধার্ত, তুমি কি আমাকে একটু ‘ফুফু’ দিতে পারো?
‘ফুফু’ আফ্রিকার জনপ্রিয় খাবার।
আহ্, গ্রামপ্রধান ও তার বউ খুব উত্তেজিত। বলল, অবশ্যই দিতে পারি মা! অবশ্যই দিতে পারি!
একজন কাজের লোক চমৎকার স্যুপের সঙ্গে কিছু ‘ফুফু’ নিয়ে এলো। মেয়েটিকে দিল। সে সবকিছু খেয়ে ফেলল।
সবাই খুশিতে আত্মহারা! আজাকাসিকে কাঁধে নিয়ে সারা গ্রামজুড়ে ঘুরানো হলো। সবকিছু শান্ত হলে গ্রামপ্রধান তাকে ডেকে পাঠালেন।
গ্রামপ্রধান বললেন, আজাকাসি, তুমি আমার মহা উপকার করেছ, বলতে গেলে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপকার। তাই আমি তোমার জীবন রক্ষা করতে চাই। কিন্তু তোমাকে অবশ্যই সততার সঙ্গে এবং এক বিন্দুও মিথ্যা না বলে, আমার কাছে বলতে হবে, তুমি কেন আমার সমস্ত সম্পদ চুরি করেছ।
আজাকাসি জবাব দিলো, হে মহৎ গ্রামপ্রধান, আমি সত্যি আপনার ধনসম্পদ চুরি করিনি। আমি একথাই সবাইকে বলতে চেষ্টা করছি।
এরপর সে গ্রামপ্রধানকে তার সব ঘটনা বলল, জঙ্গলে কী ঘটেছিল, সে কীভাবে সিংহ, সাপ, ইঁদুর ও লোকটিকে গর্তের মধ্যে দেখেছিল, কীভাবে তাদের উদ্ধার করেছিল। সে আরও বলল, সিংহ কীভাবে তাকে ধন্যবাদ জানাতে মাংস নিয়ে এসেছিল, সেগুলো বিক্রি করে তার অনেক লাভ হয়েছিল। ইঁদুর কীভাবে সোনা, হিরা ও অন্যান্য মূল্যবান ধনরত্ন নিয়ে এসেছিল, ওগুলো থেকে কয়েকটি সে বিক্রি করেছিল এবং অনেক টাকা পেয়েছিল।
কিন্তু তার মানুষ বন্ধুটি কৃতজ্ঞতা জানানোর পরিবর্তে তাকে বিপদে ফেলেছিল। যদি শেষ মুহূর্তে সাপটি তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে না আসত, তাহলে সে আর এখানে দাঁড়িয়ে ওর গল্প বলতে পারত না।
এ গল্প শুনে গ্রামপ্রধান তো অবাক আর বিস্মিত। অবিশ্বাস করার জন্য সে আজাকাসির কাছে ক্ষমা চাইল। সে তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নিল। তাকে সসম্মানে মুক্তির আদেশ দিলো। আর ওই লোকটিকে দিলো মিথ্যা বলে অন্যকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার শাস্তি।
গ্রামপ্রধানের প্রতি কোনো অসন্তোষ নেই তা বোঝানের জন্য আজাকাসি অনেক বড় আনন্দ-উৎসব আর খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করল। সারারাত ধরে খাওয়া-দাওয়া আর আনন্দ-উৎসব হলো!
priligy seratonin There are, however, important differences between the two measures
Additional reporting by Jonny Hogg in Kinshasa, Jon Herskovitzin Johannesburg and John Irish in Paris; Writing by Bate Felixand Joe Bavier; Editing by Andrew Roche Kyle jvOlWqHmfdMNcF 5 20 2022 priligy amazon canada
com 20 E2 AD 90 20Les 2011 20Commandements 20Viagra 20 20Existe 20Viagra 20Em 20Gotas existe viagra em gotas The San Jacinto range overlooks Palm Springs, Cathedral City, Rancho Mirage and several smaller desert towns to the northeast, but the main threat has been to the village of Idyllwild, a popular vacation destination in the mountains can i purchase cytotec prices