নিদ্রাহীন রাতটা এপাশ ওপাশ কাটিয়ে কেবলই হালকা ঝিমুনিতে মাথাটা একপাশে কাত হয়েছিল, মাথার ওপর দিয়ে যেন রেলগাড়ির দৌড়। তন্দ্রা কেটে যেতে চোখের ভারী পাতাদুটো জোর করে খুলে আবার বুজে চুপচাপ পড়ে থাকে জীবন। পারু মেশিন নিয়ে বসেছে। মিনিট দু’য়েক অসাড় পড়ে থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসার চেষ্টা করে জীবন, দুই কনুইয়ে ভর দিয়ে অচল ডান পা’টি টেনে নিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসে নিঃশব্দে হাঁপাতে থাকে। পুরোনো মেহগনি খাটের ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে পারুল স্বামীর দিকে মুখ ফেরায় ‘সকাল সকাল ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম। কিছু লাগলে বোলো’
কোনো উত্তর না পেয়ে জীবনের ক্লান্ত, বিনিদ্র মুখটা দেখে মুহূর্তের জন্য আনমনা হয় পারু। আমুদে মানুষটা কেমন নির্জীব হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। ঘরের গুমোট বাতাসে একটি দীর্ঘশ্বাস নিঃশব্দে মিলিয়ে দিয়ে সেলাই মেশিনে দ্রুত পা চালায় পারু। আগামী কালের ডেলিভারির কাজগুলো আজ সকালেই সারতে হবে, দুপুরে একটি প্রোগ্রাম আছে। যাবে কি যাবে না, সেই দ্বিধাদ্বন্ধে গতকাল থেকে মনটা উচাটন হয়ে আছে তার।
ছোটবেলা থেকে বইখাতার চেয়ে খেলাধূলার দিকেই বেশি ঝোঁক ছিল পারুর। দৌঁড়ে পরপর তিনবারের স্কুল চ্যাম্পিয়ন ছিল সে। স্বপ্ন দেখত, একদিন জাতীয় এ্যাথলেট হবে। জেলা পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়েও নাম উঠেছিল পারুর। কিন্তু বাড়ি থেকে অনুমতি না মেলায় আর ঢাকা গিয়ে ক্যাম্পে থেকে গ্রমিং এ যোগ দিতে পারেনি। বিকেএসপিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল মনে মনে। পারুর এসব ধিঙ্গিপনা মা একদম সহ্য করতে পারতেন না। মেয়েদের এ আবার কী ধরনের শখ? মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে উত্রে গিয়েছিল। কলেজে পা দিতে না দিতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিল বাড়ি থেকে।
ছোট একটি গার্মেন্টস কারখানার ইউনিট সুপারভাইজার পদে কর্মরত খায়রুল আলম ওরফে জীবনের সঙ্গে নতুন জীবনে প্রবেশ করল পারু। দৌঁড়বিদ হওয়ার স্বপ্ন মাথা থেকে ঝেড়ে একমাথা ঘোমটা টেনে শ্বশুরবাড়িতে ঘরকন্নায় মনোনিবেশ করল। বিয়ের বছরখানেক পর স্বামীর কর্মস্থল কোনাবাড়িতে দু’কামরার ভাড়া বাসায় নতুন সংসার হলো। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যেও ধীরে ধীরে সংসারটা নিজের মতো করে বেশ গুছিয়ে নিয়েছিল পারু। দাম্পত্য জীবনের সাড়ে চার বছরের মধ্যে দুটি সন্তানের মা। মেয়ে জয়া এবার স্কুল ছেড়ে কলেজে, ছেলে জিতু ক্লাস নাইনে।
স্বামী সন্তান নিয়ে বেশ চলছিল পারুর সংসার জীবন। খেলার মাঠের মতো সংসার জীবনের দৌড়েও এভাবে হোঁচট খেয়ে পড়তে হবে, কে জানত? গত বছর অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ পেছন থেকে আসা একটি সিএনজির ধাক্কায় জীবনের ডান পা’টা তিন টুকরো হয়ে গেল। গার্মেন্টসের চাকরিটা গেছে। অপারেশনের পর হাসপাতাল থেকে ফিরে নয়টা মাস ঘরে পড়ে আছে সে। ডাক্তার বলেছেন, আরেকটি অপারেশন লাগবে। জমানো যা কিছু ছিল, প্রথম অপারেশনেই সব শেষ। আরেকবার অপারেশন করাতে না পারলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আর আশা নেই জীবনের।
বিয়ের পর এখানে এসে কোনাবাড়ি মহিলা কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিল পারু। জীবনের গরজ না থাকায় তা আর হয়ে উঠেনি। ধরাধরি করে স্বামীর চাকরির বদলে পারুর একটা কাজের ব্যবস্থা হয়েছিল গার্মেন্টসে। বি.এ. পাস থাকলে, জীবনের সমপদেই হয়ত পারুর চাকরিটা হতো। লেখাপড়া কম থাকার কারণে কারখানার সাধারণ কর্মীর পদে নিয়োগ হলো পারুর। বেতন খুবই সামান্য। বাসা ভাড়া, ন্যূনতম সংসার খরচ আর ছেলেমেয়ে দুটোর পড়াশোনার খরচ জোগাতে কারখানার বাইরে বাড়িতেও অনেকটা সময় সেলাইয়ের কাজ করতে হয় পারুকে। করোনাকালীন দুঃসময়ে মাসশেষে কারখানার সামান্য বেতনটুকুর নিশ্চয়তা যখন ফুড়িয়ে গেল, বারো চৌদ্দ ঘন্টা ঘরের ভেতর ওই সেলাই মেশিনের খটখট শব্দই তখন এ পরিবারের জীবনীশক্তির একমাত্র জ¦ালানী।
দু’কামরার বাসাটা একটা সরু গলির মধ্যে। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ানো বিল্ডিংগুলো প্রতিযোগিতা করে একে অপরের উপর ছায়া ফেলে রাখে সারাদিন। নিচতলায় বলে দিনের বেলায়ও খুব একটা আলো আসে না। পুবের জানালার আলোয় মুখ করে কাঠের চেয়ারে সোজা হয়ে বসে মেশিনে একমনে পা চালাচ্ছে পারু। পেছন থেকে মজবুত গড়নের পারুর শীর্ণ হয়ে যাওয়া দেহাবয়বের দিকে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জীবন। বুকের ভেতর একটা হতাশার পাহাড় উঁচু থেকে উঁচু হয়ে জীবনের শ্বাসরন্ধ্রগুলো যেন বন্ধ হয়ে আসে ধীরে ধীরে। বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে বুকের চাপচাপ ভাবটাকে হালকা করার চেষ্টা করে বলে, ‘তোমার বান্ধবীদের কী একটা প্রোগ্রাম ছিল না আজ?
‘হ্যাঁ, দুপুরে, যাব না ভাবছি।’
‘যাবে না কেন? অনেকদিন কোথাও যাও না। যাও, ঘুরে আসো; পুরোনো বান্ধবীদের সাথে দেখা সাক্ষাত হলে ভালো লাগবে।’
খালি ববিন কেসটা খুলে নিয়ে নতুন একটা লাগাতে লাগাতে উত্তর দেয় পারু, ‘দেখি, কাজগুলো যদি শেষ করতে পারি…’
স্কুল-কলেজের বান্ধবীদের সঙ্গে পারুর যোগাযোগ ছিল না এতকাল। করোনাকালীন সময়ে মানসিক চাপে বিপর্যস্ত পারুর মেয়ের উৎসাহেই ফেসবুক খোলা। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় দু’যুগ পর নতুন করে যোগাযোগ। অনেক বান্ধবী অনেক বড়ো বড়ো পজিশনে চলে গেছে; কেউ কেউ ইউরোপ, আমেরিকায়। কাজের ফাঁকে তাদের ব্যাচের প্রায় তিনশত জন বান্ধবীদের ভার্চুয়াল গ্রূপ আড্ডায় প্রতিদিন কিছুটা সময়, পারুর অন্ধকার স্যাঁতসেতে জীবনে যেন একটুকরো আলোকরশ্মি। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর চৈতির বাড়িতে বন্ধুদের পুনর্মিলনীর ছোটখাটো আয়োজন করা হয়েছে আজ। গ্রূপ থেকে পারুকে বিশেষ করে যেতে বলেছে সবাই। অনেকদিন ভালো কোনো শাড়ি কেনা হয় না। জীবনের সোৎসাহে প্রোগ্রামে গেলে কোন শাড়িটা পরে যাবে ভেবে নিজের ভেতর অস্বস্তি টের পায় পারুল।
যাবে কি যাবে না স্থির করে উঠতে না উঠতেই পাশের টেবিলের ওপর ছোট্ট ফোনটা বেজে ওঠল। রিসিভ করতেই লায়লার উচ্ছসিত কন্ঠ ‘কীরে সাজগোজ চলছে বুঝি? দেড়টার মধ্যে আমি চলে আসব তোর ওখানে, রেডি থাকিস…’ লায়লার কন্ঠের ব্যগ্রতায় আর আপত্তি জানানোর অবকাশ পায় না পারু।
সিএনজি থেকে নেমে আত্মদম্ভে দাঁড়িয়ে থাকা ডুপ্লেক্স বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অজান্তেই বিস্ময় ঝরে পড়ে পারুর কন্ঠে, ‘হ্যাঁ রে লায়লা, এটা চৈতির নিজের বাড়ি!’
‘হ্যাঁ, জায়গাটা আগে কিনে রেখেছিল। গ্রামে চৈতির শ্বশুরবাড়ির অঢেল সম্পত্তি। ওদের জমির পাশ দিয়ে মহাসড়ক হওয়ার পর জমির দাম হু হু করে বেড়ে গেল। চৈতির শ্বশুরের মৃত্যুর পর গাঁয়ের জমিজমা বেচে দিয়ে ওর বর এই বাড়ির কাজ শেষ করল।’ শাড়ির আঁচল সামনে টেনে সংকুচিত পায়ে লায়লার পেছন পেছন পা বাড়ায় পারু, বিশাল গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে তার চোখদুটো ছানাবড়া। সবুজ লবির মাঝ বরাবর লাল টাইলসের সরু পথ পেরিয়ে গাড়ি বারান্দা। ছোট্ট বাগানে হরেক রঙের ফুল ঝলমলে হাসিতে ওদের স্বাগত জানাচ্ছে যেন। নিচতলার বেশ বড়ো সুসজ্জিত ড্রইংরুমে কুন্ঠিত বক্ষে প্রবেশ করতেই এক ঝাঁক বিস্মৃত প্রিয় মুখের কলরব। বেশির ভাগ মুখের আদল বদলে গেলেও চিনতে কষ্ট হয় না, কাউকে কাউকে পরিচয় ছাড়া চেনা দায়, দু-একজন একদম আগের মতো। প্রায় অর্ধশত পুরনো মুখ একে একে এসে জড়িয়ে ধরে পারুর মনে জমে উঠা দীনতার কালিমা এক লহমায় শুষে নিল যেন। নৈমিত্তিক জীবনের দুশ্চিন্তা, মলিনতা মুছে চোখে মুখে আলো ছড়িয়ে অনেকদিন পর মন খুলে পারু হেসে উঠে, যোগ দেয় এক বেলার দুঃখ বিষাদহীন আনন্দযজ্ঞে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পাট চুকে যাবার পর ছোট্ট সবুজ ছাদ বাগানের খোলা হাওয়ায় গা এলিয়ে বসল সবাই। দু’চার জনের খালি গলায় গানের পর সিডি প্লেয়ার অন করে এসে বসল চৈতি, ‘পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে… আমার মনের ফুলদানিতে রাখো তোমার মন…তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে…’ আহা! একের পর এক সেই কৈশোর উথাল পাথাল করা সুর!
গানের ফাঁকে ফাঁকে স্কুল কলেজের সেই দুরন্ত দিনগুলোর স্মৃতি মন্থনে মেতে উঠে ক্ষণকালের জন্য কিশোরী হয়ে উঠল একঝাঁক মধ্যবয়সি নারী ‘এই, সীমুর সেই হিরোটার কথা মনে আছে তোদের? স্টিকার সহ সানগøাস পড়ে সাইকেলে চড়ে স্কুলের গেটের সামনে দিয়ে পাক খেত…সীমুর দিকে তাকিয়ে চিত্ত উজাড় করা হাসির রোল পড়ে যায়।
‘স্কুলের স্পোর্টেসে মশাল নিয়ে মাঠ ঘিরে চক্কর দিতে গিয়ে আগুনের হলকায় পারুর হাত পুড়ে গিয়েছিল না একবার? বাঁ হাতে মশাল নিয়েই পারুর সে কী দৌড়, বাব্বাহ! কী ডানপিটে মেয়ে ছিলরে পারু! এই পারু, তোর হাতের সেই পোড়া দাগটা এখনও আছে না?’ নিপার ডাকে বর্তমানে ফিরে আসে পারু। সবার অলক্ষে ডান হাতের ফিকে হয়ে আসা দাগটার ওপর আলতো পরশ বুলিয়ে পারু যেন খুঁজে পেতে চায় সেই উচ্ছল, দুঃসাহসী কিশোরীকে।
দিনটা চোখের পলকে ফুরিয়ে গেল। পারুকে ফিরিয়ে দিয়ে গেল তার কৈশোরের কিছুটা প্রাণশক্তি, জীবন যুদ্ধে সুখ খুঁজে নেবার উদ্যম, রেখে গেল কিছু নিষ্কলুষ বন্ধুত্বের সুখচ্ছবি। বিদায়ের ঠিক আগ মুহূর্তে বান্ধবীরা একটা খাম তুলে দেয় পারুর হাতে। খাম খুলে পারু স্তব্ধ! অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে ছোট্ট কাগজের টুকরোটিতে বার বার চোখ বুলিযে বোঝার চেষ্টা করে পারু, দু’ক্ষ টাকার চেক! বন্ধুদের পক্ষ হতে শুভকামনা স্বরূপ। ভালোবাসায় সিক্ত মুখগুলোর দিকে নির্বাক তাকিয়ে থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে নেমে আসে পারুর দু’চোখ থেকে।
পারুর নীরব অশ্রূর সাথে বাল্যবন্ধুদের বিন্দু বিন্দু অশ্রূ যোগ হয়ে এক নতুন স্রোতে ভাসতে থাকে পারুলের গতিহীন জীবন।
x9sq64
When the premenopausal women were stratified by BMI tertiles, the positive association between the serum TT4 concentration and BC decreased as the BMI tertiles increased; this association was no longer statistically significant in the highest tertile, probably due to the smaller sample size can you buy priligy
Concern about disease recurrence was the most important factor in treatment choice, greatly influencing 37, whereas concerns about radiation or body image greatly influenced only 15 and 5 of patients, respectively what is priligy tablets
Keep up-to-date on world events, government news, and athletic achievements.
Our seasoned journalists bring you timely reporting 24/7.
Linkedin
We declare we have no conflict of interest how to get cytotec without prescription This multicenter feasibility trial randomized 100 AKI patients 1 1 in seven ICUs in Europe and Australia
Кто ты есть на самом деле?
В чем твое предназначение? В каком направлении лежит твой путь и как
тебе по нему идти?
Дизайн Человека расскажет об этом!
– Уменьшает внутренние конфликты
– Даёт конкретные рекомендации по принятию решений
– Снимает чувство вины за “неправильность”
– Позволяет выстроить эффективную стратегию жизни и карьеры – Позволяет жить
в согласии со своей природой – Даёт
конкретные рекомендации по принятию решений
– Укрепляет доверие к себе – Снижает тревожность при выборе
– Снимает давление социальных стереотипов
Всего есть четыре типа (манифесторы, генераторы, проекторы,
рефлекторы) людей на планете и у каждого из них есть стратегия принятия решения.
Кто ты есть на самом деле?
В чем твое предназначение?
В каком направлении лежит твой
путь и как тебе по нему идти?
Дизайн Человека расскажет об этом!
– Снимает чувство вины за “неправильность” – Приносит чувство согласия с собой
– Даёт право быть собой – Даёт право быть собой – Приносит чувство согласия с собой
– Даёт конкретные рекомендации по принятию решений – Даёт
конкретные рекомендации по принятию решений – Снижает тревожность при выборе
– Даёт опору на природные механизмы
Рейв-карта Human Design или Бодиграф.
Human Design – это система для определения личной уникальности и своего предназначения в
жизни. Дизайн Человека научит принимать правильные решения.