1. info@mirzapurpratidin.com : admin :
  2. news@mirzapurpratidin.com : mirzapur mirzapur : mirzapur mirzapur
শিরোনামঃ
মির্জাপুরে অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ৬ জনকে অর্থদণ্ড মির্জাপুরে সন্তানসহ এক বৌদ্ধ পরিবারের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ মির্জাপুরে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত মির্জাপুরে ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ আয়োজিত জুলাই- আগস্টে শহীদ ও আহতদের স্বরণে স্বরণ সভ মির্জাপুরে ইংরেজি শিক্ষায় ভীতি দূর করতে ওয়ার্ড মাস্টার প্রতিযোগিতা মির্জাপুরে অসামাজিক কাজ বন্ধে তৌহিদী জনতার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ মির্জাপুরে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ শহীদ ও আহতদের স্বরণে স্বরণসভা মির্জাপুরে জামায়াতের জনসভা মির্জাপুরে ২০ অবৈধ কয়লা চুল্লি ধ্বংস, ৭০হাজার টাকা জরিমান মির্জাপুরে বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

আনান ও কাকতাড়ুয়া- আবু রেজা

  • আপডেট টাইম : Friday, December 4, 2020
  • 953 বার
Print

এমন একটা সময় ছিল যখন সকল প্রাণী মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস করত। সেই সময়ে ছিল এক মাকড়সা। এর নাম আনান। সে এক গ্রামে তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে একত্রে বাস করত। সেখানে আরো থাকত হায়েনা, সজারু, কাঠবিড়ালি, বনমোরগ, গিরটিটি, শূকরসহ নানান প্রাণী।
গ্রামের মধ্যে আনান ছিল বয়সে বড়। সে নিজেদের মধ্যে একজন আরেকজনকে কীভাবে আরো বেশি সাহায্য করতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য তার সকল বন্ধু আর আত্মীয়স্বজনকে একদিন ডাকল। তারা সকলেই কৃষক। তারা সিদ্ধান্ত নিল সবাই মিলে একেক দিন একেকজনের কাজে সাহায্য করবে। কৃষিজমি ও বাড়ির চারপাশের পতিত জমিতে চাষ দেওয়া, নিড়ানি নিয়ে আগাছা পরিষ্কার করা, বীজ বোনা, ফসল ঘরে তোলা- এসব কাজ সবাই মিলেমিশে করে দেবে। যেমন, সোমবারে সবাই আনানের চাচার খামারে কাজ করবে, মঙ্গলবারে তার দাদার খামারে, বুধবারে তার ভাইপোর খামারে কাজে সাহায্য করবে।
আনান নিজেই এই কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্ব নিল। সে দেখল, সবাই এভাবে সবার কাজে সাহায্য করছে। মাসখানেক সময় পর একদিন আনান বসে ছিল ঘরের সামনে। আর নানান কথা ভাবছিল।
নিজেকে নিজেই বলল, এই যে আমরা সবাই মিলে একেক দিন একেক জনকে সাহায্য করছি। আমি এই ব্যবস্থা থেকে কিছু সুবিধা নিতে পারি। আমি অসুস্থ হওয়ার ভান ধরে শুয়ে থাকব। তাই এই অবসস্থায় আমি অন্যদের সাহায্য করতে পারব না। এই সময়ের মধ্যে আমার খামারের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। তারপর আমি আবার ভালো হয়ে যাব।
যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। পরদিন সকালে আনান নিজের বিছানায় শুয়ে থাকল। যখন তার ভাইপো তাকে ডাকলে এলো তখন সে বলল, ওহে আমার প্রিয় ভাইপো, আমার শরীরটা আজ খুবই খারাপ, আমার মনে হয় আমি তোমাদের সঙ্গে কাজে যোগ দিতে পারব না। তারা সবাই আনানের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, আগামীকাল সবাই আনানের খামারে যাবে, তাকে সাহায্য করতে। এভাবে কয়েক সপ্তাহ গেল। কিন্তু আনানের অবস্থা ভালো হলো না।
এরই মধ্যে দুয়েকজন কানাকানি করতে শুরু করল, আমরা সবাই মিলে আনানকে সহায়তা করছি, ওর জমিতে কাজ করে দিচ্ছি- এটা তো খুবই ভালো কথা। কিন্তু ও আমাদের সঙ্গে কাজে হাত লাগাবে কবে?
একথা আনানের কানে গেল। তার মনে হলো, এভাবে বেশিদিন নিজেকে বাঁচিয়ে চলা যাবে না। সে ভাবল, তাকে এমন কিছু করতে হবে, যাতে সবাই বিশ্বাস করে সত্যিই সে ভীষণ অসুস্থ ছিল। পরদিন সে তার কয়েকজন আত্মীয়স্বজন বাড়িতে ডাকল। তাদের বলল, আমার এই অসুস্থতা আরো কিছুদিন থাকতে পারে, এখনো আমার সুস্থ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। সত্যি বলতে কী, আমার অবস্থা প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে। আমার মনে হয়, আমি আর বাঁচব না।
তার আত্মীয়স্বজনের কেউ কেউ তাকে সান্ত¦না দিয়ে বলল, না, না, চাচা, তুমি মরবে না। কেউ বলল, না, না, ভাই তুমি মরবে না। আমরা ডাক্তার-কবিরাজ আনব। তারা তোমার চিকিৎসা করবে, ওষুধ দেবে।
কিন্তু আনান তাদের সকলকে বলল যে, যতই সময় যাচ্ছে ততই সে আরো দুর্বল হচ্ছে। সে তাদেরকে মৃত্যুর পর তার সৎকারের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাল।
আনান বলল, আমি মরে গেলে আমার ভাই কউয়ামি’র খামারে আমাকে সমাহিত কোরো। আমি তার খামারের ভুট্টা খেতে পছন্দ করি। ওগুলোর পাশেই আমি সমাহিত হতে চাই।
কউয়ামি ভাইকে তার খামারে সমাহিত করার ব্যাপারে সম্মতি জানাল। আসলে একজন মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান না জানিয়ে পারা যায় না। আনান আরো কিছু নির্দেশন দিতে লাগল। যেমন, তারা সুন্দর করে বড় একটা গর্ত করবে। গর্তের দেয়ালে সুন্দর করে কাপড় টানিয়ে দেবে, যাতে তার আত্মা শান্তিতে থাকতে পারে। সমাধির ভেতরে বিভিন্ন পাত্র, কড়াই, রান্নার জিনিসপত্র দিয়ে দেবে, যাতে তার আত্মা নিজের জন্য খাবার তৈরি করতে পারে। আনান এমন ভান করল যে, যত সময় যাচ্ছে তার শারীরিক অবস্থা তত খারাপের দিকে যাচ্ছে। আনানের আত্মীয়স্বজনরা তার সমাধি তৈরির কাজ শুরু দিল।
আনান খুব শীগ্রই জানতে পারল তার সমাধি তৈরির কাজ শেষ। এর পরপরই দেখল, তার ঘরের সামনে দিয়ে কেউ একজন যাচ্ছে, ঠিক তখনই এমন ভান করল যেন সে মরে গেছে। তারা তাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করল। কিন্তু আনান জেগে উঠল না। তারা ভাবল, আনান সত্যিই মরে গেছে। পরদিন তারা আনানের মৃতদেহ সেখানেই সমাহিত করল, যেখানে আনানের নির্দেশনামতো সমাধি তৈরি করা হয়েছিল। সেই রাতেই আনান সমাধির বাইরে বেরিয়ে এলো। জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করল, তা তার সমাধিতে লুকিয়ে রাখল। সে ওগুলোর কয়েকটি রান্না করল। দিনের আলো দেখা মাত্র আনান আবার সমাধিতে ঢুকে গেল এবং ঘুমিয়ে পড়ল। পরবর্তী রাতে সে আরো ভুট্টা তুলল। ওগুলো দিয়ে খাবার তৈরি করল, আর পেট পুরে খেল। এভাবে এক মাস কেটে গেল।
এদিকে কউয়ামি দেখল, কেউ না কেউ তার জমির ভুট্টা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। সে অনেক ভাবল, কে তার জমি থেকে ভুট্টা তুলে নিতে পারে? কে তার সঙ্গে এমন করতে পারে? অন্য সময় হলে সে আনানকেই সন্দেহ করত। কারণ, সে জানে তার ভাই কতটা ধূর্ত। কিন্তু সে তো মৃত। সে ভাবতে পারছে না কে তার সঙ্গে এমন করতে পারে।
কউয়ামি ভাবল জমিতে একটা ফাঁদ পেতে রাখবে। সে গেল কাঠমিস্ত্রির কাছে। সেখান থেকে সে শক্তপোক্ত কাঠের তক্তা ও খুঁটি জোগাড় করল। ওগুলো নিয়ে এলো খামারে। ওগুলোর মধ্যে আলকাতরা মাখালো। তারপর খুব কৌশলে ওগুলো সে জমিতে পুঁতে দিল। দেখতে মনে হলো, ওগুলো কাকতাড়–য়া। কিন্তু কাকতাড়–য়াগুলো শুধু ভয় দেখানোর জন্য পুঁতে রাখা হয়নি। ওগুলোর মধ্যে ছিল ফাঁদ।
কউয়ামি নিশ্চিত ছিল চোর যেই হোক না কেন সে ধরা পড়বেই। কাঠের খুঁটিগুলোর একটিতে ছোঁয়া লাগলেই তার গায়ে আলকাতরা লেগে যাবে। কিংবা তার গায়ে কোনো চিহ্ন থেকে যাবে, যা দেখে চোরকে চেনা যাবে না।
সেই রাতে আনান ভাইয়ের খামারের ভুট্টা তোলার জন্য আবার বের হলো। তখন তার মনে হলো, খেতের মাঝে কেউ একজন বা কোনো প্রাণীর মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবল, কেউ একজন তাকে দেখছে।
কিন্তু সে লক্ষ করল, প্রাণীর মূর্তিটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, একটুও নড়ছে না। সে আরো আগ্রহী হয়ে উঠল। সে চুপিসারে ধীরে ধীরে প্রাণীর মূর্তির দিকে এগিয়ে চলল। যেহেতু কাঠের খুঁটিগুলো খুব বেশি লম্বা ছিল না, তাই আনানের মনে হলো, অবশ্যই সে বালক বয়সি কেউ হবে। সে ওর সঙ্গে একটু চালাকি করতে চাইল। ওর দিকে হামাগুড়ি দিয়ে চুপিসারে এগিয়ে গেল। তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি এইমাত্র দেখলাম তোমার মা তোমাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। সে তোমাকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বাড়িতে যেতে বলছে।
কিন্তু কাকতাড়–য়ার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।
আনান আবার বলল, তোমার মা তোমাকে খুঁজছে। তোমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।
কিন্তু তারপরও ওর মধ্যে কোনা প্রতিক্রিয়া নেই। আনান বালক বয়সী কারো মধ্যে এমন দৃষ্টতা দেখে অসন্তুষ্ট হলো। সে বলল, দেখো, আমি তোমাকে বলছি, হে বাউন্ডুলে বালক। তুমি আমার কথার কোনো জবাব দিচ্ছ না কেন?
এত কথার পরও কোনো জবাব নেই। আনান আরো রেগে গেল। সে বলল, তুমি কি চাও আমি তোমাকে একটা থাপ্পড় মারি? বেশ ভালো। আমি তোমাকে একটা থাপ্পড়ই মারব। তখন দেখ কেমন লাগে!
এই কথা বলে আনান কাকতাড়–য়াকে জোড়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। থাপ্পড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত আলকাতরার সঙ্গে আটকে গেল। সে অনেক টানাটানি করল। কিন্তু ছুটতে পারল না।
আনান চিকৎকার করে বলল, আমাকে যেতে দাও বদমাস! আমার হাত ছাড়ো।
সে হাত ছাড়ানোর জন্য কাঠের খুঁটির দিকে চেয়ে তীব্র চিৎকার করে উঠল। ভয়ার্ত কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলল, আমাকে যেতে দাও। নয়তো আমি তোমাকে আবার থাপ্পড় মারব।
এই বলে সে অন্য হাতে তাকে আবার থাপ্পড় মারল। থাপ্পড় মারার সঙ্গে অন্য হাতটিও আগের মতোই আলকাতরায় আটকে গেল। আনান খুবই বিরক্ত হলো। সে আরো রেগে গেল।
আমাকে যদি তুমি না ছাড়ো, যেতে না দাও, আমি তোমাকে খুব জোরে একটা লাথি দেব। এই বলে সে কাকতাড়–য়াকে বাম পা দিয়ে জোরে একটা লাথি দিল। বাম পা’টাও আলকাতরায় আটকে গেল। সে আবার তার ডান পা দিয়ে আরেকটা লাথি দিল। আগের মতোই তার ডান পা’টাও আটকে গেল। আনান এবার আষ্টে-পৃষ্টে কাকতাড়–য়ার সঙ্গে আটকে গেল। সে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু কোনোভাবেই সে নিজেকে মুক্ত করতে পারল না। অবশেষে সে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। সে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা ছেড়ে দিল। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল।
সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে আনানের ভাই কউয়ামি পায়চারি করতে খামারে এলো। তার চোর ধরার পরিকল্পনা কাজে লাগল কি না তা দেখারও আগ্রহ ছিল। সে খুব সতর্কভাবে চারদিকে তাকাল। সে দেখল, না, আজ কোনো ভুট্টা চুরি হয়নি। মনে হলো তার পরিকল্পনা কাজে লেগেছে। সে নিজে নিজেই হাসল। তারপর সে আলকাতরা মাখানো কাঠের খুঁটিগুলো দেখতে গেল। খুঁটিগুলোর খুব কাছে গিয়ে দেখতে পেল, একটা খুঁটিতে আটকে আছে একটা মাকড়সা। সে খুব দ্রæত ওর কাছে গিয়ে দেখতে পেল ওঠা তার ভাই আনান।
কউয়ামি বিস্মিত হলো। চিৎকার করে বলল, আনান, আনান! তুমি এখানে কী করছ? তুমি না মরে গেছ?
আনান খুব শান্তভাবে মৃদুস্বরে বলল, আনান অবশ্যই মরে গেছে। তুমি যাকে দেখতে পাচ্ছ, সে ওর ভূত!
কউয়ামি ছিল কথাবার্তায়, চালচলনে খুবই সহজ-সরল। অনেক কুসংস্কারেও সে বিশ্বাস করত। তাই সে যখন এ কথাগুলো শুনল, সত্যিই সে বিশ্বাস করল যে, আনানের ভূতই তার সঙ্গে কথা বলছে। সে ভয় পেয়ে গেল এবং দৌড়ে পালাতে চাইল। সে দৌড়ে সোজা গ্রামে চলে গেল। সবাইকে ডেকে বলতে লাগল, আনানের ভূত! আমি এই এই মাত্র দেখে এলাম, আমার খামারে আনানের ভূত!
গ্রামের সবাই তাকে ঘিরে ধরল। জানতে চাইল, ঘটনাটা কী?
কউয়ামি বলল, সে জমিতে কাঠের খুঁটি পুঁতে আলকাতরা মেখে রেখেছিল, ওর মধ্যে দেখেছে আটকে আছে আনানের ভূত! গ্রামের সবাই তা দেখতে চাইল। তারা কউয়ামির খামারের দিকে ছুটল। সেখানে তারা দেখতে পেল কাঠের খুঁটিতে আটকে আছে আনান।
তারা জানতে চাইল, তুমি এখানে কী করছ? তুমি তো মরে গেছ! তাও খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। আমরা তোমাকে সমাহিত করেছি।
আনান বিলাপের স্বরে বলল, তোমরা যাকে দেখছ, সে আনানের ভূত। সে এখন খুব অশান্তিতে আছে।
গ্রামবাসীরাও ভয় পেয়ে গেল। তারাও দৌড়ে পালাতে লাগল। তখন আনান চিৎকার করে তাদের ডেকে বলল, থামো, তোমরা থামো! দৌড়ে পালাচ্ছ কেন? আমি তোমাদের আত্মীয়, তাই নয় কি? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যা হোক, আমি তোমাদের সাহায্য চাই। তোমাদের সাহায্য আজ আমার খুব প্রয়োজন।
গ্রামবাসীদের মধ্যে সাহসী একজন তার একটু কাছে এল। সে জানতে চাইল, আনান ভাই, তোমার কী ধরনের সাহায্য দরকার?
আনান জবাব দিল, আমি এই আলকাতরা মাখা খুঁটিতে আটকে আছি, তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ না? আমাকে মুক্ত করার জন্য তোমাদের সাহায্য দরকার।
গ্রামবাসীর মধ্য থেকে দুই-তিনজন তাকে সাহায্য করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাল। তারা তাকে মুক্ত করার জন্য টানতে লাগল। আনান তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে লাগল। এখানে ধরে টানো, একটু এদিকে এসে টান দাও, আরেকটু জোরে টানো।
কিন্তু গ্রামবাসীদের মধ্যে একজন যে আনানের পা ধরে টানছিল, সে পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। তার মাথায় আঁচড় দিল। সে চেঁচিয়ে বলল, তোমরা একটু থামো। এটা কোনো ভূত নয়। এটাই সত্যিকারের আনান। সে আদৌ মরেনি।
তারা সকলেই আনানকে টেনে মুক্ত করার চেষ্টা থামিয়ে দিল। সে বলল, হ্যাঁ, আমি আসল ঘটনা বুঝেছি! এদিকে টানো, ওদিকে টেনে তোলোÑ একটা ভূত কীভাবে এমন নির্দেশনা দিতে পারে?
সে আনানকে লাঠি দিয়ে মারতে লাগল। জমি থেকে মাটির ঢেলা তুলে ছুড়ে মারল। আর তাকে বিদ্রƒপ করতে লাগল।

কিছুক্ষণ পর ভাইয়ের প্রতি কউয়ামির মায়া হলো। সে সবাইকে থামতে বলল।
তারপর তারা সবাই মিলে আনানকে মুক্ত করল। তারপর, তার এমন অন্যায় কাজের জন্য তাকে শাস্তি দিল। সবাই তাকে এ গ্রাম ত্যাগ করে দূরে চলে যেতে বলল। হুশিয়ার করে দিল, কখনো যেন তাকে এ গ্রামে আর দেখা না যায়।
আনানকে এ গ্রামে নিষিদ্ধ করায় তার পরিবারের সবাই খুব লজ্জা পেল। তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত তারা সবাই লজ্জায় পালিয়ে বেড়ায়। যখনই আমরা কোনো মাকড়সা দেখতে পাই, ওটা মেঝের ফাঁক-ফোঁকড়ে অথবা অন্ধকার কোনায় বা অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
কারণ, ওদের পূর্বপুরুষ আনান যে অন্যায় কাজ করেছে সেজন্য তারা আজও ভীষণ লজ্জা পায়!

নিউজটি শেয়ার করুন..

One response to “আনান ও কাকতাড়ুয়া- আবু রেজা”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 Mirzapurpratidin এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ভিডিও বা ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি
Site Customized By NewsTech.Com